সন্দীপন দত্ত, মালদহ: দিনদিন খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি। যে কোনও সময় হামলার আশঙ্কায় প্রহর কাটছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের। এপারে আত্মীয়দের কাছে যে চলে আসবেন, সেই রাস্তাও কার্যত বন্ধ। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে বাড়ির বাইরে পা রাখার অর্থ, প্রাণ সংশয়ের প্রবল সম্ভাবনা। এমন পরিস্থিতিতে ওপারের আত্মীয়দের জন্য এখন প্রার্থনা করা ছাড়া আর রাস্তা দেখছেন না এপারের পরিজনরা। চরম উত্কণ্ঠায় দিন কাটছে তাঁদের। আফসোস, এই মহাবিপদের সময় চাইলেও কিছুই করতে পারছেন না।
পুরাতন মালদহ, হবিবপুর, কালিয়াগঞ্জ, হিলি সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, বাংলাদেশে আমাদের আত্মীয়রা এখন বাড়ি থেকে বের হতেই ভয় পাচ্ছেন। ভারতে আসার রাস্তা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের অসহায় অবস্থার কথা ভেবে চোখের জল ফেলা আর প্রার্থনা করা ছাড়া কিছু করার নেই এখন।
সীমান্তবর্তী ওই বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কিছু মানুষ প্রাণভয়ে মরিয়া হয়ে চোরাপথে ভারতে আসার জন্য তৈরি। বাংলাদেশে থাকার চেয়ে বিএসএফের হাতে ধরা পড়াকেই এখন অনেকে নিরাপদ বলে মনে করছেন। এই পরিস্থিতিতে ঝোপ বুঝে কোপ মারতে তৈরি সীমান্ত পার করার কাজে যুক্ত দালালরা। তারা এখন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অত্যন্ত সক্রিয় হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, আগে যেখানে গড়ে একজন মানুষকে চোরাপথে এদেশে আসতে দালালদের গড়ে ২০ হাজার টাকা দিতে হত, এখন দ্বিগুণের বেশি চাইছে তারা। তবে, অনেকে টাকা দিতে চাইলেও দালালরা নিশ্চিতভাবে সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না। কারণ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কড়া প্রহরা থাকায় তারাও এবিষয়ে কিছুটা সন্দিহান।
এদিকে, বেআইনি অনুপ্রবেশ রুখতে সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে বিএসএফ। সীমান্তবর্তী গ্রামে পেট্রোলিং কয়েকগুণ বাড়িয়েছে পুলিশও। মালদহের সীমান্ত অঞ্চলে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
বাংলাদেশে অস্থিরতার সুযোগে জঙ্গি অনুপ্রবেশের আশঙ্কাও রয়েছে মালদহের একাধিক সীমান্তে। এমন অবস্থায় গৌড়বঙ্গের মালদহ ও দুই দিনাজপুরের সীমান্তে গোয়েন্দারা অত্যন্ত সক্রিয়। কাঁটাতারহীন এলাকায় যে কোনও ধরনের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখলে দ্রুত খবর দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে স্থানীয় গ্রামবাসীদের।
সম্প্রতি দালালদের সাহায্যে ভারতে ঢুকতে গিয়ে মালদহ, দুই দিনাজপুরে ধরা পড়েছে বেশকয়েকজন বাংলাদেশি। মাসখানেক আগেই দালাল ধরে দুই বাংলাদেশি যুবক ভারতে প্রবেশ করে। মালদহের মহদিপুর সীমান্তের কাছে তাদের ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয় গোয়েন্দাদের। জিজ্ঞাসাবাদের পর দু’জন অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করে ইংলিশবাজার থানার পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়ে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, বেশকিছু দালালের গতিবিধি নিয়ে ধৃতরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানিয়েছে। পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, এই দুই বাংলাদেশি যুবক ওপারে দালাল ধরে চোরাপথে এপারে আসে। এছাড়া কেউ চোরাপথে নদীতে সাঁতার কেটে এপারে আসছে। আবার কেউ দালালদের টাকা দিয়ে বৈষ্ণবনগর, হবিবপুরের গোরু পাচারকারীদের সঙ্গেও কাঁটাতারবিহীন সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকছে। মালদহে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের জওয়ানদের নজরদারি।-নিজস্ব চিত্র