সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ‘জীবিতকুণ্ড পুকুর সংস্কারের টাকা, তারাপীঠ মন্দির ও শ্মশানের টাকা তৃণমূলের পার্টি ফান্ডে যাচ্ছে। নেপথ্যে রয়েছে টিআরডিএর চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায়।’ রবিবার সিউড়ির দলীয় কার্যালয়ে তারাপীঠ মন্দিরের সেবাইত তথা নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই অভিযোগ তুললেন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা। যা নিয়ে তুমুল বির্তকের সৃষ্টি হল তারাপীঠজুড়ে। এই অসত্য অভিযোগ দাবি করে আশিসবাবু বলেন, ‘নির্বাচনে পরাজয় হবে জেনে হাহাকার করছেন বিজেপির জেলা সভাপতি।’ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘তারাপীঠের মতো ধর্মীয় স্থানকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য তুলে ধরে নোংরা রাজনীতি করার প্রতিবাদে বিজেপির সভাপতির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হবে।’
বেশ কয়েকদিন হল তারাপীঠের জীবিতকুণ্ড সংস্কার শুরু হয়েছে। এদিন সেই কুণ্ড সংস্কার নিয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিজেপি নেতা ধ্রুব সাহা বলেন, ‘রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের রামপুরহাট-২ ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের করে খাওয়ার জায়গা টিআরডিএ। তারাপীঠ মন্দিরে আগত পুণ্যার্থীদের বিভিন্নভাবে আর্থিক নিপীড়ন করা হচ্ছে। এখন ভিআইপি লাইনে পুজো দেওয়ার নামে পুণ্যার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তারামাতা সেবাইত সংঘের নামে কুপন ছাপিয়ে সেই টাকা তোলা হচ্ছে। ১৫ দিনে যার কালেকশন হয়েছে ৬৪ লক্ষ টাকা। এই টাকা দিয়ে মন্দিরের উন্নয়নে খরচ করা হচ্ছে না। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বদলে টাকা রাখা হচ্ছে এক তৃণমূল নেতার কাছে। এই টাকাকে কালো টাকায় পরিণত করছে মন্দির কমিটি। এর মাথায় রয়েছে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, শ্মশানের জায়গায় যজ্ঞ ও গাছ লাগানোর জন্য ১৫ বছর ধরে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। প্রতি মাসে সেখানে ১৫ লক্ষ টাকা কালেকশন হচ্ছে।’ তাঁর অভিযোগ, ‘এই টাকা যাচ্ছে তৃণমূলের পার্টি ফান্ডে। এই টাকার উপর ভর করে সামনের ভোট বৈতরণী পার হতে চাইছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে ফ্লেক্স ঝুলিয়ে জানানো হচ্ছে, জীবিতকুণ্ড তাঁদের টাকায় সংস্কার হচ্ছে। আবার টিআরডিএর পক্ষ থেকে বোর্ড লাগিয়ে জানানো হয়েছে, প্রায় আড়াই কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে জীবিতকুণ্ড সংস্কার করা হচ্ছে। এই কাজের ঠিকাদারকে ১৫ দিনে ৫০ লক্ষ টাকা করে দিচ্ছে মন্দির কমিটি। আর কাজ করছে টিআরডিএ। তাহলে টিআরডিএর বরাদ্দ অর্থ কী হচ্ছে, তা আর স্পষ্ট করে বলার দরকার নেই। আমরা এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাব।’
যদিও আশিসবাবু ও সুকুমারবাবু বলেন, টিআরডিএর বরাদ্দ অর্থে জীবিতকুণ্ডের উপরে দোতলা নির্মাণ কাজ হবে। সেখানে ভক্তদের ভোগ খাওয়া ও সৌন্দর্যায়নের কাজ হবে। আসলে ওই বিজেপি নেতা অসত্য ভাষণে পটু। এর আগেও বহুবার তাঁর অজ্ঞানতার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে।
তারাময়বাবু বলেন, মন্দিরের পক্ষ থেকে জীবিতকুণ্ডটা সংস্কার করা হচ্ছে। এর সঙ্গে টিআরডিএর কোনও যোগ নেই। টিআরডিএ কুণ্ডের উপরে নির্মাণ করবে। আমরা কিছু কিছু করে টাকা দিচ্ছি। মন্দিরের টাকা সুরক্ষিত রয়েছে। একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এই টাকা কোনও পার্টির ফান্ডে যাচ্ছে না। সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। আর ধ্রুব সাহা মন্দিরের কেউ নন। তিনি পবিত্র এই স্থানকে নিয়ে নোংরা রাজনীতি করে ভক্তদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা করার পাশাপাশি অভিযোগ প্রমাণের দাবি করছি। নতুবা ধ্রুব সাহার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব।