• স্কুল শিক্ষকদের টিউশনি বন্ধে কঠোর শিক্ষাদপ্তর
    বর্তমান | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, ঘাটাল: আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রাইভেট টিউশন বন্ধ করতে নজিরবিহীন পদক্ষেপ করতে চলেছে শিক্ষাদপ্তর। কোনও ভাবেই স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রাইভেট টিউশন করা চলবে না। ঘাটাল মহকুমার অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক হিমাদ্রীশেখর ঘোষ এ বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, এবার আর শুধু মৌখিক নির্দেশ নয়, বরং বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য গোপন সূত্র ব্যবহার করে পথে নেমে কড়া নজরদারি চালানো হবে। যদি কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে লুকিয়েও টিউশন চালিয়ে যান, তবে শিক্ষা দপ্তরের নিয়মানুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ করা হবে। 

    দীর্ঘদিন ধরেই এক শ্রেণির শিক্ষক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে,  তাঁরা প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা বা প্রজেক্টের নম্বর কমিয়ে দেওয়ার প্রচ্ছন্ন ভয় দেখিয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিজের কাছে পড়তে বাধ্য করছেন। এই প্রবণতা কেবল অনৈতিকই নয়, বরং সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের ওপর এক মানসিক ও আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে। অভিযোগ, যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে টিউশন পড়ে না, ক্লাসের মধ্যে তাদের তুচ্ছ কারণে তিরস্কার করা হয় এবং পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়া হয়। শিক্ষার পবিত্র আঙিনায় এমন বৈষম্যমূলক আচরণ রুখতে প্রশাসন এবার বদ্ধপরিকর।

    উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের জীবনধারণের অন্যতম অবলম্বন হল প্রাইভেট টিউশন। ঘাটাল শহরের এক প্রাইভেট টিউটর সন্তু বেরা, ঘাটাল থানার জয়নগরের কাজল ঘোষ প্রমুখ বলেন, সরকারি বিদ্যালয়ের এক শ্রেণির শিক্ষক শিক্ষিকারা টিউশনকেই তাঁদের মূল পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। অথচ স্কুলের শিক্ষকরা সরকার থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। বেকার যুবক যুবতীরা বলেন, শিক্ষকরা যদি বিদ্যালয়ে বরাদ্দ নির্ধারিত সময়েই ছাত্রছাত্রীদের পূর্ণ মনোযোগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে পাঠদান করতেন তবে পড়ুয়াদের আলাদা করে গৃহশিক্ষক রাখতে হতো না। এই বাণিজ্যিকীকরণের ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার মান কমছে, অন্যদিকে মেধার পরিবর্তে অর্থ ও ব্যক্তিগত আনুগত্য প্রাধান্য পাচ্ছে।

    এই পরিস্থিতিতে বীরসিংহ ভগবতী হাইস্কুলের গণিতের শিক্ষক সুদীপ মণ্ডল বলেন, শিক্ষাদপ্তরের এই নির্দেশিকাকে প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকার নৈতিকভাবে মান্যতা দেওয়া উচিত মন্তব্য করে জানান, একটা সময় তিনিও টিউশন করতেন, কিন্তু শিক্ষাদপ্তর যেদিন থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সেদিন থেকেই তিনি ছাত্রস্বার্থ ও সরকারি নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সমস্ত প্রাইভেট টিউশন ত্যাগ করেছেন। তবে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় হল কিছু শিক্ষক এখনও ব্যক্তিগত লাভের জন্য এই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে গোপনে গৃহশিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

    অন্যদিকে, অনেক শিক্ষক শিক্ষিকা ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে বা প্রশাসনের নজর এড়াতে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। অনেক সময় দাবি করা হয়, তাঁরা পারিশ্রমিক ছাড়াই ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে টিউশন পড়াচ্ছেন। তবে এই ‘‘বিনামূল্যে পাঠদানের’ আড়ালে থাকা আর্থিক লেনদেনের সত্যতা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই সমস্যা সমাধানে অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দু’টি কঠোর বিকল্প ব্যবস্থা বা ‘দাওয়াই’ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, যদি কোনও শিক্ষক সত্যই বিনে পয়সায় ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করতে চান, তবে তাঁর সেই সদিচ্ছা কেবল নিজের বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।  অন্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বিনে পয়সাতেও পড়ানো যাবে না।  ছবি: এআই
  • Link to this news (বর্তমান)