• অশান্ত বাংলাদেশ, পদ্মায় না মৎস্যজীবীদের
    বর্তমান | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, ডোমকল: বাংলাদেশের অশান্তির আঁচ যাতে এপারে না লাগে, তার জন্য বাড়তি সতর্ক বিএসএফ। তারই অঙ্গ হিসেবে সাগরপাড়ায় মূল পদ্মায় মাছ ধরতে অলিখিত বিধিনিষেধ আরোপ করার অভিযোগ। মৎস্যজীবীদের দাবি, গত দু' দিন ধরে সাগরপাড়ার চরকাকমারী এলাকায় মূল পদ্মায় মাছ ধরতে নামতে নিষেধ করতে করছে বিএসএফ। ফলে প্রায় তিরিশজন মৎস্যজীবী গত দু' দিন ধরে পদ্মার নালাগুলিতেই মাছ ধরে দিন কাটাচ্ছেন। ওপার বাংলায় ঘনঘন অশান্তির জেরে এভাবে রুটিরুজিতে টান পড়ায় তিতিবিরক্ত মৎস্যজীবী থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা।

    সাগরপাড়ার কিছুটা অংশ দিয়ে মূল পদ্মা প্রবাহিত হয়েছে। সাগরপাড়ার চরকাকমারী, সিংপাড়ায় দু' দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে পদ্মা। সাগরপাড়ার একাধিক মৎস্যজীবী ওই অংশে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ওপারের ছাত্রনেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু হতেই উত্তাল হয়ে পড়ে ওপার বাংলা। পরিস্থিতি বুঝে সীমান্ত ব্যাপক নজরদারি শুরু করে বিএসএফ। পাশপাশি পরের দিন থেকেই অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে বিভিন্ন সীমান্তে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি কৃষক থেকে মৎস্যজীবীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়। কিছু কিছু জায়গায় এই ক' দিনে সীমান্তের কাছে বহু কৃষককে চাষের কাজে যেতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। রানিনগর, সাগরপাড়া, জলঙ্গির কিছু কিছু সীমান্তের কাছে চাষ করতে যাওয়া  কৃষকদের ওপরে বাড়তি নজরদারি করেছে বিএসএফ। পাশপাশি সাগরপাড়ার চর কাকমারী সহ আশপাশের কিছু এলাকার মৎস্যজীবীদের দাবি, গত দু' দিন ধরে তাঁদের মূল পদ্মায় মাছ ধরতে নামতে নিষেধ করছে বিএসএফ। 

    বাবলু মণ্ডল নামে সাগরপাড়ার এক মৎস্যজীবী বলেন, গত দু' দিন ধরে চর কাকমারীতে মূল পদ্মায় মাছ ধরতে দিচ্ছে না বিএসএফ। এই কারণে আমরা মূল পদ্মার বদলে পদ্মার নালাতে মাছ ধরেছি। বাংলাদেশের এই পরিস্থিতির জন্যই এমনটা করছে বলে জানাচ্ছে বিএসএফ। যাই হোক, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক সেটাই চাইছি। নইলে রুটিরুজিতে টান পড়বে আমাদের। স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা ফারুক মণ্ডল বলেন, পদ্মার নালাগুলিতে মাছ ধরতে দিলেও মূল পদ্মায় মাছ ধরতে নিষেধ করছে বিএসএফ। তাঁরা অবশ্য আমাদের সুরক্ষা বিষয়টি ভেবেই এমনটা করছে।

    বর্ডার ডেভেলপমেন্ট কমিটির সম্পাদক জুলফিকার আলি বলেন, ঘন ঘন অশান্ত হচ্ছে বাংলাদেশ আর তার প্রভাব পড়ছে সীমান্তের খেটে খাওয়া চাষি ও মৎস্যজীবীদের ওপর। এবারও শুনছি সতর্কতামূলক পরিস্থিতি হিসেবে মূল পদ্মায় মাছ ধরতে নামতে দিচ্ছে না বিএসএফ। অবশ্যই এতে তাদের খুব একটা কিছু করার নেই। কারণ এর আগেও দেখেছি কখনও বাংলাদেশিরা, কখনও আবার সেদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী পর্যন্ত ভারতের সীমায় ঢুকে এপারের মৎস্যজীবীদের অপহরণ পর্যন্ত করেছে। তাই দেশের মৎস্যজীবীদের সুরক্ষার কথা ভেবে বিএসএফ হয়তো এই অলিখিত বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে যাই হোক এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক সেটাই চাইব।

    যদিও বিএসএফ কর্তাদের দাবি, নদীতে নামতে দেওয়া হচ্ছে না এই অভিযোগ সত্য নয়। মূলত এই পরিস্থিতিতে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টির জন্য আমরা তাঁদের বারবার সতর্ক করছি কোনওভাবেই যেন মাছ ধরতে ধরতে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ না করে। তাছাড়া সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে চাষি, মৎস্যজীবীরা যেমন চাষ করছিল, মাছ ধরছিল তেমনই চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)