গ্রামবাসীদের মধ্যে বাঘের আতঙ্ক, বাঁকুড়ার সিমলাপালের অজানা জন্তুর পায়ের ছাপ
বর্তমান | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, খাতড়া: অজানা চারপেয়ে জন্তুকে কেন্দ্র করে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছে সিমলাপালে। রবিবার সিমলাপালের দুবরাজপুর অঞ্চলের রায়বাঁধ গ্রামের আলু জমিতে ওই অজানা জন্তু ও তার পায়ের ছাপ দেখতে পান স্থানীয়রা। এদিন এক চাষির সামনে চলে আসে জন্তুটি। তা দেখে তিনি ‘বাঘ বাঘ’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। চিৎকার শুনে মাঠে থাকা অন্যান্য চাষিরা ছুটে যান। তাঁরাও ওই জন্তুটিকে দেখতে পান। লোকজন জড়ো হওয়ায় সেটি মাঠের পাশে পুকুর পাড়ের ঝোপে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশাপাশের গ্রাম থেকে বহু মানুষ সেখানে ভিড় জমান। ওড়িশার সিমলিপাল অভয়রান্য থেকে আসা জিনাত ও তার সঙ্গীর স্মৃতি এখনও বাঁকুড়াবাসীর মনে টাটকা হয়ে রয়েছে। ফলে এদিন ফের বাঘ এসেছে মনে করে সকলেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তবে ওই জন্তুর পায়ের ছাপ পরীক্ষার পর সেটি বাঘ নয়, বাঘরোল বলে বনদপ্তর জানিয়েছে। এদিন খবর পেয়ে বনদপ্তরের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। পায়ের ছাপ পর্যবেক্ষণ ও তা মেপে দেখার পাশাপাশি তাঁরা ছবি তুলে নিয়ে যান। বনদপ্তর ওই জন্তুকে বাঘরোল বলে নিশ্চিত করলেও স্থানীয়দের মন থেকে ভীতি পুরোপুরি দূর হয়নি। বনদপ্তর এলাকায় নজরদারি শুরু করেছে বলে আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
বাঁকুড়া দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও প্রদীপ বাউরি বলেন, সিমলাপালের রায়বাঁধ এলাকায় এক জন্তুর পায়ের ছাপ দেখতে পেয়ে সাময়িক বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। পায়ের ছাপের মাপ ও ছবি পরীক্ষা করার পর তা বাঘের নয় বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এটি বাঘরোলের পায়ের ছাপ বলেই মনে হচ্ছে। ডিএফও আরও বলেন, দলমা পাহাড় ও সিমলিপাল অভয়ারণ্য থেকে কোনও কারণে বাঘ বাঁকুড়ায় এলেও পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম জেলা পার হতে হবে। ফলে সেখানে আগে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যেত। সম্প্রতি ওই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আবেদন করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী লক্ষীকান্ত পাল বলেন, এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আলু জমির কাজ সারার পর খাবার খেতে বাড়িমুখো হই। তখন সামনে কয়েক হাত দূরে ওই বড় আকারের জন্তুটিকে দেখতে পাই। সেটিকে বাঘ বলেই আমার মনে হয়েছিল। জন্তুটা আমার দিকেই এগিয়ে আসছিল। তখন ভয়ে ‘বাঘ বাঘ’ বলে চিৎকার করে উঠি। সেইসঙ্গে আমার কাছে থাকা গামছাটা নাড়াতে থাকি। তা দেখে আশাপাশের খেতের লোকজন ছুটে আসে। তখন জন্তুটি ধীরে ধীরে কাছের পুকুর পাড়ের ঝোপের দিকে চলে যায়।
অপর এক চাষি অভিজিৎ পাল বলেন, আমিও এদিন ওই জন্তুটিকে দেখতে পাই। সকালে মাঠে যাওয়ার সময় সেটি রাস্তা পার হচ্ছিল। জন্তুর গায়ে ডোরা কাটা দাগ ও সেটির মুখ বড় ছিল। বাঘ বলেই আমার মনে হয়েছে। এদিনের পর মাঠে একা কাজ করতে ভয় লাগছে। এলাকার অন্যান্য চাষিরাও আতঙ্কে রয়েছেন।