নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: সরকারি পদ ব্যবহার করে সার্কিট হাউসে দলীয় কর্মসূচি করে বিতর্কে জড়ালেন বীরভূমের তৃণমূলের নেতারা। রবিবার বিকেলে সিউড়ি সার্কিট হাউসে জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে কোর কমিটির কনভেনর অনুব্রত মণ্ডল, চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ থেকে শুরু করে কোর কমিটির প্রায় সমস্ত সদস্যই ছিলেন। ছিলেন বীরভূম ও বোলপুর লোকসভার দুই সাংসদ শতাব্দী রায় এবং অসিত মাল। এদিনের বৈঠকে কাজল শেখ ও সুদীপ্ত ঘোষ নিজেদের মধ্যে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
কোর কমিটির বৈঠক করেন সার্কিট হাউস হল? এনিয়ে কোর কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের সভাপতি কাজল শেখ বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর কোর কমিটির আহ্বায়কই দিতে পারবেন। কারণ তিনিই বৈঠক ডাকেন। আমি কোর কমিটির সদস্য মাত্র। আমাকে আহ্বায়ক যেখানে বৈঠকে ডাকবেন, সেখানে যাওয়াটাই কর্তব্য বলে মনে করি। যদিও কাজল জানান, এই বৈঠক সম্পূর্ণভাবেই রাজনৈতিক। রাজনীতির বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে এনিয়ে উত্তর এড়িয়েছেন কোর কমিটির কনভেনর অনুব্রত মণ্ডল। দলীয় সূত্রের খবর, এদিনের কোর কমিটির বৈঠক সিউড়িতে হবে বলেই কনভেনরের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছিল। তবে সিউড়ির কোথায় হবে, তা জানানো হয়নি। যেহেতু দলীয় বৈঠক, তাই কোর কমিটির সদস্যরা ভেবেছিলেন, বৈঠক হবে সিউড়ি দলীয় পার্টি অফিসেই। কিন্তু শেষ মুহূর্তে হঠাৎই বদলে যায় বৈঠকের ঠিকানা। সিউড়ির সার্কিট হাউসে বৈঠক হয়। বৈঠকের ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে অনুব্রত লিখেছেন, ‘বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির বৈঠক। যাকে কেন্দ্র করে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি জায়গায় এভাবে দলীয় বৈঠকে হয়ে পারে কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
এনিয়ে সাংসদ অসিত মালের সাফাই, উন্নয়ন নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীও বলেন, উন্নয়ন নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেই কারণেই সার্কিট হাউস বেছে নেওয়া হয়েছে। কনভেনর অনুব্রতর পাশে দাঁড়িয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোর কমিটির এক সদস্য অবশ্য বলেন, দলীয় বৈঠক হলেও যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও সরকারি পদে রয়েছেন। প্রত্যেকেরই সার্কিট হাউসে প্রবেশাধিকার রয়েছে। তাই বিতর্কের কিছু নেই। বৈঠকে তো আর জেলা কমিটি কিংবা ব্লক সভাপতিরা ছিলেন না। তবে, বৈঠকে এমন এক সদস্য ছিলেন, যিনি কিন্তু সরকারি পদে নেই। এনিয়ে জেলা বিজেপির সহ সভাপতি দীপক দাস বলেন, সরকারি সম্পত্তিকে তো তৃণমূল নেতারা নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি ভাবতে শুরু করে দিয়েছে। তাই দল আর সরকারকে গুলিয়ে ফেলছেন। এই অভ্যাস এখনই ত্যাগ করতে না পারলে ছাব্বিশের পর মাঠাঘাটে ঘুরে বেড়াতে হবে।
বৈঠক সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে দুই সংসদের তহবিল থেকে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করা যেতে পারে কি না, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কোর কমিটির এক সদস্য বলেন, ভোটের আগে যেহেতু টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে, সেই কারণে সাংসদদের তহবিলের টাকায় কোনও উন্নয়নমূলক কাজ যদি জরুরি ভিত্তিতে করিয়ে নেওয়া যায় কি না, সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এনিয়ে বৈঠকে দুবরাজপুর নিয়ে কাজলের সঙ্গে সুদীপ্ত ঘোষের তুমুল বিতণ্ডাও হয়। সূত্রের খবর, দুবরাজপুর পুরসভার ৫০ বছরর পূর্তি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন ঘিরে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কোন্দলে জড়ান দলের সিংহভাগ কাউন্সিলার। অনুব্রত মণ্ডল কাউন্সিলারদের ডেকে সেই সমস্যার সমাধান করে দেন। সেই বৈঠকে কোর কমিটির অন্যান্য কয়েকজন সদস্য থাকলেও ডাকা হয়নি কাজলকে। সেই প্রসঙ্গে তুলতেই সুদীপ্তর সঙ্গে কাজল বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।