• রেলমন্ত্রীকে চিঠি, কালিকাখালি হল্ট স্টেশনের অনুমোদন চাইল বিজেপি
    বর্তমান | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: নতুন হল্ট স্টেশনের জন্য আগেই টাকা বরাদ্দ করেছে রেল। তারপর সংবাদপত্রে টেন্ডার ডাকাও হয়ে গিয়েছে। অনলাইনে দরপত্র জমা দেওয়ার কাজও চলছে। এরকম অবস্থায় রেলমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ওই স্টেশনের অনুমোদন চাইল বিজেপি। অনেকটা বিয়ে বাড়ির ভোজ খাওয়ার পর বিয়ের তারিখ জানতে চাওয়ার মতো ঘটনা। অদ্ভুতভাবে রেলমন্ত্রীকে দেওয়া সেই জোড়া চিঠিকে সামনে রেখেই ওই প্রকল্পের কৃতিত্ব জাহির করছে বিজেপি। তমলুক-দীঘা রেলপথে কালিকাখালি হল্ট স্টেশনের ক্ষেত্রে এমনই ঘটনা ঘটেছে। অথচ, এই হল্ট স্টেশন তৈরির জন্য পাঁশকুড়া-হলদিয়া-দীঘা সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের দীর্ঘ লড়াইয়ের কথা সকলেই জানেন। অরাজনৈতিক ওই সংগঠনের কৃতিত্বকে বেমালুম চেপে গিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে কালিকাখালি হল্ট স্টেশনের কৃতিত্ব নিতে ব্যস্ত বিজেপি।

    তমলুক-দীঘা লাইনে লবণ সত্যাগ্রহ স্মারক হল্ট এবং দেশপ্রাণ স্টেশনের মাঝে কালিকাখালি হল্ট স্টেশনের দাবি দীর্ঘদিনের। ২০১৪ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে চণ্ডীপুর ব্লক সদরে ওই হল্ট স্টেশনের অনুমোদন দেয় রেল। তারপর প্রায় ১২ বছর কেটে গিয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় ওই হল্ট স্টেশনের কাজ শুরু হয়নি। গত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এজন্য দুই কোটি ৫৫ লক্ষ ৮৩ হাজার ৫৯৫ টাকা বরাদ্দ করে রেল। গত ২ ডিসেম্বর খড়্গপুর ডিভিশনের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার(হেডকোয়ার্টার) ওই ফান্ড বরাদ্দ হওয়ার কথা অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ারকে চিঠি দিয়ে জানান। এরপর গত ৩ ডিসেম্বর সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেন্ডার ডাকা হয়। ওই হল্ট স্টেশনের জন্য অর্থ বরাদ্দ হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হতেই ৫ ডিসেম্বর কাঁথির বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী কালিকাখালি হল্ট স্টেশন তৈরির দাবিতে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে চিঠি দেন। মন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে হল্ট স্টেশনের দাবি যাতে বিবেচনা করা হয় সেই আর্জি জানানো হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর নন্দীগ্রামের বিধায়ক কালিকাখালি হল্ট স্টেশন তৈরির জন্য সার্ভে করার আর্জি জানিয়ে রেলমন্ত্রীকে চিঠি দেন। অথচ, একাধিকবার প্রয়োজনীয় সার্ভে হয়ে যাওয়ার পর ওই ফান্ড বরাদ্দ করেছে রেল।রেলমন্ত্রীকে দেওয়ার ওইসব চিঠি সামনে রেখে কালিকাখালি হল্ট স্টেশনের কৃতিত্ব নিতে চাইছে বিজেপি। অথচ, এই জেলায় কালিকাখালি, ডোরো কৃষ্ণনগর এবং নীলকুণ্ঠায় হল্ট স্টেশনের জন্য ২০২০ সাল থেকে আন্দোলন করছে প্যাসেঞ্জার্স কমিটি। নভেম্বর মাসে ওই কমিটি ২৭১ পাতার গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে এই দাবি ডিআরএম অফিসে জমা করে। রেলের পক্ষ থেকে সংগঠনের সম্পাদক সরোজ ঘড়াকে চিঠি দিয়ে কালিকাখালি হল্ট স্টেশনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হওয়ার কথা জানানো হয়।এনিয়ে চণ্ডীপুরের প্রাক্তন বিধায়ক অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ২০১৪ সালে এই স্টেশনের অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। বিধায়ক হিসেবে বারবার রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। শেষমেশ রেল কর্তৃপক্ষ এই স্টেশন তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েছে। এর জন্য বিজেপির কোনও ভূমিকা নেই।

    প্যাসেঞ্জার্স কমিটির সম্পাদক সরোজ ঘড়া বলেন, আমরা এই জেলায় তিনটি হল্ট স্টেশনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছি। শেষমেশ ডোরো কৃষ্ণনগর এবং কালিকাখালি হল্ট স্টেশনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করে টেন্ডার ডেকেছে রেল। আমরা কৃতিত্ব নিয়ে কোনও বিতর্কে যাব না। এনিয়ে নথিই কথা বলবে। কাঁথির সংসদ সদস্য সৌমেন্দু অধিকারী বলেন, শিশিরবাবু সাংসদ থাকাকালীন কালিকাখালি নিয়ে রেলমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আমি সাংসদ হিসেবে রেলমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। কৃতিত্বটা বড় কথা নয়, শেষমেশ প্রজেক্ট হচ্ছে এটাই আসল কথা।
  • Link to this news (বর্তমান)