বরানগরে খসড়া তালিকায় বাবা-মা’র নাম থাকলেও ‘নিখোঁজ’ ছেলে-মেয়ে, নিউ বারাকপুরে জীবিত ভোটার হলেন ‘মৃত’
বর্তমান | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: বাবা, মা ইনিউমারেশন ফর্ম পেয়েছিলেন। তাঁদের মেয়ে ও এক ভাইপোর ফর্ম পাননি। অথচ, খসড়া তালিকায় তাঁদের ‘নিখোঁজ’ দেখানো হয়েছে। কেউ আবার ফর্ম জমা দিলেও তালিকায় দেখা যাচ্ছে, তিনি ‘স্থানান্তরিত’। বরানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের খসড়া ভোটার তালিকায় এমন ভ্রান্তিবিলাসের ছড়াছড়ি! নিউ বারাকপুরে আবার জীবিত ভোটারকে ‘মৃত’ দেখানো হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, তড়িঘড়ি কাজ শেষ করতে গিয়ে এমন বহু ভুল রয়ে গিয়েছে। এই হয়রানির দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। যদিও কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, ডেটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে কোথাও কোনও ভুল হলে তা দ্রুত সংশোধন করে নেওয়া হবে।
বরানগর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৭৫ নম্বর পার্টের ভোটার সুনীল দাস। তাঁর মেয়ে সিঞ্জিনি দাস পেশায় আইনজীবী। সুনীলবাবু ও তাঁর স্ত্রী ইনিউমারেশন ফর্ম পেলেও পাননি তাঁদের মেয়ে। ফর্ম আসেনি বলে জানিয়েছিলেন বিএলও। এলেই দিয়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্তও করেন। সেই ফর্ম আর আসেনি। অথচ, খসড়া তালিকায় দেখা সিঞ্জিনিকে ‘খুঁজে পাওয়া যায়নি’ বলে দেখানো হয়েছে। সুনীলবাবুর কলেজ পড়ুয়া ভাইপো সোহম দাসের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। সুনীলবাবু বলেন, ‘অদ্ভুত বিষয়। মেয়ে ও ভাইপোর ইনিউমারেশন ফর্ম দিল না। এখন তালিকায় দেখানো হচ্ছে, তাঁরা নিখোঁজ।’ ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৬৫ নম্বর পার্টের বাসিন্দা আদিত্য বিশ্বাস। তিনি ইনিউমারেশন ফর্ম জমা দিয়েছেন। বিএলওর সই করা এক কপি ফর্ম তাঁর কাছে রয়েছে। অথচ,খসড়া তালিকায় দেখানো হয়েছে, তিনি নাকি স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত! আদিত্যবাবু বলেন, ‘এই সমস্যার দায় তো আমার নয়। অথচ, এখন আমাকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’ ওই ওয়ার্ডেরই ৬৬ নম্বর পার্টের বৃদ্ধা ভোটার কানন দে। খসড়া তালিকায় বলা হয়েছে, অন্যত্র তাঁর তালিকায় নাম রয়েছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৭৩ নম্বর পার্টের কঙ্কনা ঘোষ ঠিকঠাক ফর্ম পূরণ করে জমা দিলেও এখন তাঁকে বিএলও জানিয়েছেন, অবিলম্বে নথি জমা দিতে হবে। যদিও তাঁর মা-বাবার নাম রয়েছে ২০০২ এবং ২০২৫-এর ভোটার তালিকায়। সেই মতো তিনি ফর্মের নির্দিষ্ট অংশ পূরণও করেছেন। বরানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এরকম ভূরি ভূরি উদাহরণ। তৃণমূলের দমদম-বারাকপুর সাংগঠনিক জেলা সহ সভাপতি রামকৃষ্ণ পাল বলেন, ‘বিএলওদের উপর অমানুষিক চাপ দিয়ে রাতারাতি কাজ করানো হয়েছিল। তাই খসড়া তালিকায় এত ভুল ধরা পড়ছে। এখন সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দায় সম্পূর্ণভাবেই কমিশনের।’
নিউ বারাকপুর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৫ নম্বর পার্টের আগাপুরের বাসিন্দা তাপসী বালা। তাঁকে মৃত বলে দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দিব্যি বেঁচে আছি। ছেলে এসে বলল খসড়া তালিকায় নাম নেই। আমাকে মৃত দেখানো হয়েছে। মন খারাপ হল। নতুন করে নাম তোলার জন্য ফর্ম পূরণ করতে হয়েছে। এই ভুল তো করেছে কমিশন। আমাদের সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।’
এখানকারই বাসিন্দা গৌতম মজুমদার অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। তাঁকে ‘স্থানান্তরিত’ দেখানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, পুরসভার ৭, ৮ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বহু ন্যায্য ভোটারকে ভুল করে ‘মৃত’, ‘নিখোঁজ’ ও ‘স্থানান্তরিত’ দেখানো হয়েছে।