• ভোটাধিকার থাকবে তো! সংশয় না কাটিয়ে শুধু আশ্বাসে লাভ কী? প্রধানমন্ত্রীর এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া বার্তা নিয়ে তোপ মতুয়াদের
    বর্তমান | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • শ্যামলেন্দু গোস্বামী, বারাসত: তাহেরপুরে বিজেপির সভায় পৌঁছোতে না পেরে কলকাতা বিমানবন্দরে বসে ফোনে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এসআইআর আবহে প্রধানমন্ত্রীর এই সভার দিকে অনেক আশা নিয়ে তাকিয়েছিলেন রাজ্যের মতুয়া, নমঃশূদ্র মানুষজন। কিন্তু রাজ্যের বর্তমান ও প্রাক্তন শাসক দলের সমালোচনা, বেশ কিছু গরম গরম প্রতশ্রিুতি মিললেও মতুয়াদের নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার ইস্যুতে নীরব ছিলেন তিনি। তাঁর এই ‘নীরবতা’ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা বাড়তেই রাতে ফের ময়দানে নামেন মোদি। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে মতুয়াদের ‘পাশে থাকার’ বার্তা দেন। আর তাতে আশ্বস্ত হওয়ার বদলে দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে মতুয়াদের! প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমি প্রতিটি মতুয়া এবং নমঃশূদ্র পরিবারকে আশ্বস্ত করছি যে আমরা সর্বদা তাদের সেবা করব। তারা এখানে তৃণমূলের করুণার উপর নির্ভরশীল নয়। আমাদের সরকার সিএএ এনেছে। তার জন্যই তাঁদের ভারতে মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের অধিকার রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার শপথ নেওয়ার পর আমরা মতুয়া ও নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের জন্য আরও বেশি কিছু করব।’ মতুয়ারা বলছেন, ‘এমন প্রতিশ্রুতি তো আগেও দেওয়া হয়েছে। আমরাও বিজেপিকে ভোট দিয়েছি। এখন তো আমাদের দুশ্চিন্তা, ভোট দিতে পারব কি না। সেই উত্তর না দিয়ে ভবিষ্যতের আশ্বাসে কী হবে?’

    মতুয়া সমাজকে বিজেপি তাদের ‘কোর ভোটব্যাংক’ মনে করে। নাগরিকত্ব ও সিএএ ইস্যু সামনে রেখেই মতুয়াদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে গেরুয়া শিবির। অনেকে বলেন, রানাঘাট হল বিজেপির কাছে মতুয়া রাজনীতির ল্যাবরেটরি! এহেন গুরুত্বপূর্ণ জায়গার সমাবেশে সবচেয়ে জ্বলন্ত ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘নীরবতা’ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই জলঘোলা হতে শুরু করেছে। ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতেই রাতে মোদি এক্স-হ্যান্ডেলে বার্তা দিতে বাধ্য হলেন কি না, তা নিয়েও বাড়ছে চর্চা। 

    বনগাঁ মহকুমায় সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ শতাংশ মতুয়া ভোটার। এবার এসআইআর-এ শুনানির মুখোমুখি হতে হবে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মতুয়াকে। হাবড়ার মতুয়া সুমন বালা বলেন, ‘আবারও বিজেপির জুমলা। ভোটাধিকার না থাকলে এসব কথার কী মানে?’ একই কথা বাগদার হরিপদ বিশ্বাসের। তাঁর খেদ, ‘ভেবেছিলাম রানাঘাটের সভায় আমাদের নিয়ে বলবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু টুঁ শব্দ করলেন না। রাতে যা লিখেছেন, সেটা আরেকটা ললিপপ।’ 

    তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি মমতা ঠাকুর বলেন, ‘বিজেপি যদি সত্যিই পাশে থাকে, তাহলে সভায় সেই কথা বলতে এত ভয় পেলেন কেন প্রধানমন্ত্রী? নাগরিকত্বের মতো জীবন-মরণ ইস্যুকে বিজেপি বছরের পর বছর ধরে শুধু ভোট টানার টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছে। আমাদের একটাই দাবি, নিঃশর্ত নাগরিকত্ব। মতুয়ারা বুঝে গিয়েছে সিএএ বিজেপির কাছে কোনও প্রকল্প নয়, নিছক রাজনৈতিক জুজু। ভোটের আগে দেখানো হয়। আর ভোট মিটলেই গায়েব। শুনানি শুরু হলে ভয়ঙ্কর ছবি সামনে আসবে।’ বিজেপি প্রভাবিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সাধারণ সম্পাদক সুখেন্দ্রনাথ গাইন বলেন, ‘এত চিন্তার কিছু নেই। আমরা ক’দিন পরেই রাষ্ট্রপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এনিয়ে কথা বলব। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের এ প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। কারও নাম বাদ যাবে না।’
  • Link to this news (বর্তমান)