• ‘তৃপ্তি মারা গিয়েছে, বাকিরা কেমন আছে?’ জোর গুঞ্জন, চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচার সামনে উপচে পড়া ভিড়
    বর্তমান | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘মাত্র দু’বছর দশমাস বয়স ছিল। এর মধ্যেই মারা গেল কীভাবে? অকালমৃত্যু নাকি অন্যকোনও রহস্য।’ পাশ থেকে একজন বললেন—‘পরজীবীতে আক্রান্ত হয়েছিল। তা থেকেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু। খবরে তো তাই বলছে।’ ফের জবাব এল—‘পরজীবী তো সংক্রামক। বাকিদের কোনও সমস্যা হবে না তো?’

    দু’দিন আগেই বাঘিনি তৃপ্তির অকালমৃত্যু হয়েছে। তিনমাসের মধ্যেই তিনটি বাঘিনির মৃত্যুতে চিড়িয়াখানায় ডোরা-কাটার সংখ্যা কমে হয়েছে মাত্র ৪। তাই রবিবার ছুটির দিনে আলিপুর পশুশালায় ভিড় জমল বাঘের খাঁচার সামনেই। কেমন আছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার? গর্জন করছে তো? এই নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে প্রবল উৎসাহ। একইসঙ্গে দিনভর খাঁচার সামনে চলল নানা গুঞ্জন। হঠাৎ পরপর এত বাঘ মারা যাচ্ছে কেন? পর্যটকদের মনেও ঘোরাফেরা করছে নানা কৌতূহল। সব মিলিয়ে বড়দিনের আগে শেষ উইক-এন্ডে বাবুর এনক্লোজারকে অন্তত ১০ গোল দিল কালো-হলুদ ডোরাকাটার খাঁচা। ‘ভিজিটার্স চয়েস’-এ দিনের সেরা রয়্যাল বেঙ্গল শো। 

    রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ টিকিট কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে বাবাকে প্রথম প্রশ্ন ছোট্ট দিয়ার, ‘সাদা বাঘের খাঁচায় কিন্তু আগে যাব। কোনদিকে খাঁচাটা?’ ন’বছর বয়সি বারাসতের বাসিন্দা খুদের মন তখন ছটফট করছে। তার নাগাড়ে প্রশ্নে খানিকটা বিরক্ত বাবাও। যদিও টিকিট কাটতেই মেয়ের মন রাখতে প্রথম গন্তব্য বাঘের খাঁচাই। খোলা বাঘের এনক্লোজারের সামনে তিলধারণের জায়গা নেই। ভিড় হালকা করার জন্য সকাল থেকেই বাঁশি বাজাতে বাজাতে কার্যত ক্লান্ত চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তারক্ষীরা। তাঁদের ‘এগিয়ে চলুন’, ‘এগিয়ে চলুন’ বার্তায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করতে নারাজ দর্শকমহল। রয়্যাল বেঙ্গলের রয়্যাল হাঁটা দেখাতে ছোটদের কাঁধে তুলে নিচ্ছেন অভিভাবকরা। 

    রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের নতুন এনক্লোজারের সামনে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন প্রবীণ দম্পতি। আমতলা থেকে চিড়িয়াখানা এসেছিলেন তাঁরা। সোমনাথ সরকার নামে প্রৌঢ়ের কথায়, খবরের কাগজে পড়েছি, প্রজননের জন্যই তৃপ্তিকে নাকি আনা হয়েছিল। কিন্তু, প্রজননকার্যের আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এখন আর মাত্র একটি বাঘিনি রয়েছে। তাঁরও বয়স হয়েছে। ফলে পরবর্তীতে চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা কি আরও কমে যাবে?’ এই প্রশ্ন শুধু ওই ব্যক্তির একার নয়, চিড়িয়াখানায় অন্য পর্যটকদের মধ্যেও দিনভর এনিয়ে গুঞ্জন কানে এল। আলিপুর পশুশালা সূত্রের খবর, বনদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ভাবনাচিন্তা হচ্ছে আলিপুরে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে। শীঘ্রই আলিপুরে বাঘিনি এনে প্রজননের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে। দেখানোর বিষয় নয়। এটা ধারাবাহিক।’  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)