পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সামলাতে গিয়েছিলেন তিনি নিজেই। হাত জোড় করে বুঝিয়েও দর্শকদের মাঠ থেকে বার করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। উল্টে তাঁর আক্রান্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। গালিগালাজ করে, ধাক্কা দিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে বিক্ষুব্ধ দর্শকদের একটি দল সরিয়ে দিতে গিয়েছিল বলে তদন্তে উঠে আসছে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির বেশ কিছু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও ভিডিয়োয় এমন দৃশ্য দেখেছেন বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিটের তদন্তকারীরা। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল, তারও পর্যালোচনা চলছে।
পুলিশের পুরনো অভিজ্ঞ কর্তারা অনেকেই বলছেন, “রাজীব কুমারের মতো দক্ষ পুলিশ অফিসারের পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়াটা অভাবনীয়!” গত ১৩ ডিসেম্বরের সল্টলেকের মাঠের একটি ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ( আনন্দবাজার এর সত্যতা যাচাই করেনি), এক হাতে ‘ম্যানপ্যাক’ নিয়ে কালো সুটধারী রাজীব মাঠ থেকে স্টেডিয়ামের দিকে যাচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছেন কয়েকজন পুলিশকর্মী। ফেন্সিং ভেঙে মাঠে ঢোকা দর্শকদের বোঝানোর চেষ্টা করে রাজীবের রণে ভঙ্গ দেওয়ার দৃশ্য ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে। ভিডিয়ো ফুটেজে রাজীব-সহ পুলিশকর্মীদের দিকেও চেয়ার ছোড়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন খোদ ডিজিকে এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হল? পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে দেখে ডিজি ময়দানে নামলেন, অথচ তাঁর কাছাকাছি কোনও পুলিশকর্তা বা ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার কাউকেই কেন দেখা গেল না? সমন্বয় ব্যবস্থা কী করে এতটা ব্যর্থ হল? এই বিষয়গুলি ভাবাচ্ছে সিটের তদন্তকারীদের।
জানা গিয়েছে, ওই ঘটনার আগের দিন রাজীবই মাঠের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠক করেছেন সব পক্ষের সঙ্গে। কোন অফিসার এবং পুলিশকর্মীরা কোন দায়িত্বে থাকবেন, তা স্থির করে দিয়েছিলেন ডিজি। রাজীব নিজেও ঘটনার দিন সকালেই যুবভারতীতে পৌঁছে গিয়েছিলেন।কিন্তু মেসি-বিভ্রাটের জেরে পরিস্থিতি কোন দিকে যেতে পারে, তা কেউই আঁচ করেননি বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তে উঠে এসেছে, শাহরুখ খানের গাড়ি মাঠের কাছ থেকে ফিরে যাওয়ার সময়েও পাহারা দিতে আর কোনও গাড়ি দেওয়া হয়নি বলে সূত্রের খবর।
প্রাক্তন পুলিশকর্তারা অনেকেই এই প্রসঙ্গে ২০১৭ সালের যুব বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রসঙ্গ তুলছেন। সে-বার আন্তর্জাতিক ফিফা যুব বিশ্বকাপের প্রায় ১২টি ম্যাচযুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে হয়েছিল। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই প্রতিযোগিতাও মসৃণ ভাবে সারা হয়। তখন দায়িত্বে থাকা এখন প্রাক্তন রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশের কোনও শীর্ষ কর্তা ওই খেলা উপলক্ষে যুবভারতীতে সশরীরে হাজির থাকেননি। বিধাননগরের তৎকালীন কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহ ও ডেপুটি কমিশনার সন্তোষ পান্ডের নেতৃত্বে পুলিশকর্মীরা পর পর ম্যাচের আয়োজন করেছিলেন।’’
তাঁরা জানাচ্ছেন, আগাম পরিকল্পনা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্টেডিয়ামের বাইরে জলের পাউচ রাখা হয়েছিল। মাঠে ভিআইপি-র প্রবেশাধিকার ছিল না। শুধু ফিফার তালিকাভুক্ত সাংবাদিক এবং চিত্র সাংবাদিকদের মাঠের পাশে বসতে দেওয়া হয়। তখনও ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন অরূপ বিশ্বাস। তাঁকেও মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে পুলিশের এই কর্তাদের দাবি। ফিফার আধিকারিকরাও মূল মাঠে প্রবেশের অনুমতি পাননি। মোট দর্শকাসনের ৮০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হয়েছিল। পুরো স্টেডিয়ামটি ১২৫টি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। প্রতিটি ভাগের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। কর্তব্যরত পুলিশকর্তারা ‘কমেন্ট্রি বক্স’-এর কাছ থেকেই ‘ম্যান প্যাক’-এ তদারকি করেছিলেন।