• পুলিশ-পুরসভা জানেই না, বড়দিনের আগে অতিথিশালার রিপোর্ট পেশের নির্দেশ
    আনন্দবাজার | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • পাড়ায় পাড়ায় হোটেল-অতিথিশালা চলছে, অথচ প্রশাসন জানেই না। হিসাব নেই পুরসভার কাছে। নজর রাখে না পুলিশও। সাম্প্রতিক একাধিক ঘটনার প্রেক্ষিতে এই পরিস্থিতির বদল করতে চেয়ে সমস্ত পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সংশ্লিষ্ট এলাকায় এমন কতগুলি হোটেল, অতিথিশালা বা আস্তানা আছে, তা দেখে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য। কিন্তু, নির্দেশের কয়েক মাস পরেও সেই রিপোর্ট জমা পড়েনি। ফলে বড়দিনের আগে এ নিয়ে নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়েছে প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে। কিন্তু রাতারাতি এমন রিপোর্ট তৈরি করা যাবে কী ভাবে, সেই নিয়েই এখন ফাঁপরে পড়েছে পুলিশ। সূত্রের দাবি, খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, এ শহরের ৫০ শতাংশ হোটেল, অতিথিশালা বা ধর্মশালার হিসাবই নেই প্রশাসনের খাতায়। সেখানে কারা থাকছেন, কী উদ্দেশ্যে থাকছেন, নজর নেই সে দিকেও।

    এই পরিস্থিতিতে রাজ্য পুলিশের তরফে কমিশনারেটগুলিকে আগামী তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বড়দিন ও বর্ষবরণের উৎসবের আগে এমন সমস্ত হোটেল, অতিথিশালার উপরে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলিতে কোথায়, কত জন থাকতে পারেন, গত ছ’মাসে কত জন থেকেছেন, তাঁরা কোথা থেকে এসেছিলেন— এমন সব তথ্য চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, পুরসভাকে ফাঁকি দিয়ে যেখানে এ ভাবে অতিথিদের থাকতে দেওয়া হচ্ছে, সেই জায়গার মালিকের বিরুদ্ধে পৃথক ভাবে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে পুলিশকে। কিন্তু অভিযোগ, উৎসবের মরসুমে, স্বাধীনতা দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো বিশেষ দিনের আগে থানা থেকে নজরদারি চালানোর কথা বলা হয়। কিন্তু সেই দিন বা উৎসব পেরিয়ে গেলেই কলকাতার হোটেল, অতিথিশালাগুলি কার্যত ‘খোলা হাট’-এর চেহারা নেয়। ‘রেজিস্টার’-এ যে নাম-ঠিকানা লেখা হয়েছে বা কলকাতায় থাকার যে কারণ দেখানো হয়েছে, তা সত্যি কিনা, সেই নিশ্চয়তা মেলে না।

    অভিযোগ, সেই সুযোগেই কখনও প্রতিবেশী দেশের সাংসদের মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে হোটেল থেকে, কখনও ভিন্‌ রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা দুষ্কৃতীদের থাকার জায়গা হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে শহরের কোনও অতিথিশালা। কখনও আবার জঙ্গিরা এ শহরেই হোটেল, অতিথিশালা বদলে বদলে থাকছিল বলে খবর সামনে আসছে। এই পরিস্থিতিতে উৎসবের মরসুমের আগে কড়া হাতে সমস্তটা সামলাতে হোটেল, অতিথিশালা চিহ্নিতকরণের কাজে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে নবান্ন সূত্রের দাবি।

    লালবাজারের এক কর্তা জানাচ্ছেন, পুরসভার হিসাব অনুযায়ী, শহরে এমন হোটেল, অতিথিশালার সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। কিন্তু আদতে এর চেয়ে অনেক বেশি অতিথিশালা এই মুহূর্তে কলকাতায় রয়েছে বলে পুলিশের খোঁজ-খবরে উঠে আসছে। পুর আইন অনুযায়ী, কোথাও অতিথিশালা চালাতে হলে পুরসভাকে কর দিতে হয়। পুরসভাকে না জানিয়ে অতিথিশালা চললে প্রতি বর্গমিটারের হিসাবে জরিমানা ধার্য করার বিধানও রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, জরিমানা আদায় তো দূর, বছরের পর বছর অনুমোদনহীন অতিথিশালা পুরসভার নজরের বাইরেই থেকে যায়। প্রতি বছর পুরসভার কর বাবদ ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকা। কিন্তু পুলিশ কী করে? স্থানীয় থানা থেকেই বা কেন পদক্ষেপ করা হয় না?

    নিয়ম অনুযায়ী, অতিথিশালা চালাতে হলে পুরসভার পাশাপাশি স্থানীয় থানায় চিঠি দিয়ে জানাতে হয়। প্রতিদিন আবাসিকদের হিসাব রাখতে হয়। সপ্তাহে এক দিন নিয়ম করে থানা থেকে কোনও অফিসারের ওই হিসাব খতিয়ে দেখার কথা। এ ছাড়া, মাঝেমধ্যেই এলাকার অতিথিশালা পরিদর্শন করার কথা স্থানীয় থানার। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয় না বলে অভিযোগ। কলকাতার একটি থানার অফিসারের দাবি, এই সব কারণেই ‘অনলাইন গেস্ট ফর্ম’ অ্যাপ চালু করা হয়েছিল। তাতে থানায় বসেই যেমন সব দেখা যায়, তেমনই হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সময়ের সঙ্গে পরে ফর্ম পূরণের সময় মিলিয়ে দেখে নেওয়া যায়। যদিও বাস্তবে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ হোটেল কর্তৃপক্ষ অ্যাপটি সম্পর্কেই অবগত নন। বড় হোটেল ও অতিথিশালা নিয়ম মেনে ‘ফরেনার্স রিজিয়োনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস’ (এফআরআরও) ওয়েবসাইটে তথ্য তুলে দিলেও ছোট হোটেল বা অতিথিশালার সেই বালাই নেই। এখন তালিকা তৈরি করে কি এই প্রবণতা বন্ধ করা যাবে? শহরের হোটেল, অতিথিশালা নিয়ে কড়াকড়ি করা যাবে? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। স্পষ্ট উত্তর মিলছে না।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)