দিব্যেন্দু সরকার, আরামবাগ
প্রতিশ্রুতি ছিল কংক্রিটের সেতু হবে। কিন্তু বাঁশের নতুন সেতু তৈরি করে, ফুল–মালা দিয়ে সাজিয়ে, ঢাক–ঢোল বাজিয়ে উদ্বোধন করেছেন বিধায়ক। বিধায়ক বলেছিলেন, কোনও সেতু থেকেই টোল নেওয়া হবে না। কিন্তু তার উল্টো চিত্র বাস্তবে।
পারাপারের জন্য রীতিমতো নেওয়া হচ্ছে টোল। কোনও রসিদ বা টিকিটও দেওয়া হচ্ছে না। এই নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কাজিয়া। বিজেপি পরিচালিত খানাকুল ২ পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ধান্যঘোরি বন্দর ফেরিঘাটের জন্য প্রায় ২১ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার দরপত্র ওঠে কয়েক মাস আগেই।
অভিযোগ, বিধায়ক ঘনিষ্ঠ একজন সেই ফেরিঘাটের ডাক পাওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচিত হন। যদিও তৃণমূলের অভিযোগ, ‘ব’ কলমে বিধায়কেরই এই ফেরিঘাট। তিনি লোকলজ্জার খাতিরে তাঁরই ঘনিষ্ঠ এক কর্মীকে দায়িত্ব দিয়ে এই ফেরিঘাট চালাচ্ছেন। সম্প্রতি ফেরিঘাটের এই বাঁশের সেতু ফুল দিয়ে সাজিয়ে, ঢাক বাজিয়ে উদ্বোধন করেন খানাকুলের বিজেপি বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ।
বিধায়কের দাবি, রাজ্য সরকার ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও সেতু করেনি। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বিধায়ক শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছেন। খানাকুলের মানুষ বুঝে গিয়েছেন, বিধায়ক কত বড় তোলাবাজ। বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন— কংক্রিটের সেতু করে দেওয়া হবে। ফেরিঘাটগুলো টোল ফ্রি করে দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র অন্য। ফেরিঘাট থেকে টাকা লুট চলছে। এই টাকার ভাগ–বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করেই মারপিট ওঁদের নিজেদের মধ্যেই। বিধায়কের পাল্টা দাবি, তৃণমূল পাগলের দল। আসলে এই ঘাটের টেন্ডার করেছে পঞ্চায়েত সমিতি। যারা টেন্ডারের সর্বোচ্চ দরপত্র দিয়েছে, তারা পেয়েছে।
তৃণমূল আগে নিজেদের দিকে আঙুলটা তুলুক। বিধায়ক বরং বাঁশের সাঁকো করে মানুষকে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই অভিযোগ ওঠে, বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষের নাকে–মুখে ঘুষি মেরেছেন বিজেপি বিধায়ক। এই নিয়েই মাঠে নামে তৃণমূল। অভিযোগ, খানাকুল দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাকক্ষে মিটিং চলাকালীন, ফেরিঘাটের দরপত্রের টাকা নিয়ে গণ্ডগোল হয়।
শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ জানতে চান, কেন টাকা জমা দেওয়া হয়নি। অভিযোগ, তার পরেই বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ নিজের দলেরই শিক্ষা কর্মাধক্ষকে বেধড়ক ঘুষি মারেন। একদিকে খানাকুলের ধান্যঘোরি বন্দর, অন্য দিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের হরিশচক। মাঝে রূপনারায়ণ। রূপনারায়ণের উপরে কংক্রিটের সেতু নেই। রূপনারায়ণের জল বাড়লে, বাঁশের সেতু ভেঙে যায় প্রতি বছর। নতুন করে বাঁশের সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত, খেয়া পারাপারই ভরসা দুই জেলার মানুষদের।
দুই জেলার মানুষ এই ফেরিঘাট দিয়েই টোলের টাকা মিটিয়ে যাতায়াত করেন। যদিও নির্দিষ্ট কত অঙ্কের টাকা টোল দিতে হবে, তার কোনও তালিকা নেই। রসিদও নেই। নিত্য যাতায়াতকারীদের মধ্যে মনসা মণ্ডল, শিপ্রা দোলুই, রামকুমার দাসদের নদী পারাপারে কারও কাছে ১৩ টাকা, কারও কাছে ২৩ টাকা, কারও কাছে ১০ টাকা করে টোল নেওয়া হচ্ছে বিনা রসিদে। এতে তাঁরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিজেপির অন্দরেও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকার এক বিজেপির কার্যকর্তা মন্টু দোলুই বলেন,‘বিধায়ক যদি টোল ফ্রি করার কথা বলে থাকেন, তা হলে আমি বলব, ওটাই ঘোষণা করা উচিত। প্রতিশ্রুতি রাখা উচিত। না হলে, জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাবে। বিধায়ক যদি ফেরিঘাটে পারাপার ফ্রি করে দেন, তা হলে অনেক বেশি ভোট পাবেন।’ তৃণমূল নেতা রমেন প্রামাণিক বলেন, ‘সুশান্ত ঘোষ একটা জালি বিধায়ক। তাই ভোটের আগে মিথ্যে বলে মানুষকে ভুল পথে চালিত করেছিল। ধিক্কার জানাচ্ছি।’ বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘তৃণমূলের মুখ নাড়ানোই উচিত নয়। ওরা আগে আঙুল তুলুক নিজেদের দিকে। তার পরে বলতে আসবেন।’