আজকাল ওয়েবডেস্ক: মঙ্গলবার শুরু ঐতিহ্যবাহী পৌষ উৎসব ও মেলা। তার আগে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। নিরাপত্তায় যাতে কোনও ফাঁকফোকর না থাকে, সেই লক্ষ্যেই কড়া নজর রেখেছে বীরভূম জেলা পুলিশ ও প্রশাসন। একই সঙ্গে প্রস্তুতির প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও মেলা কমিটি।
রবিবার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বিশ্বভারতী ও পুলিশ প্রশাসনের তরফে পূর্বপল্লীর মেলার মাঠ পরিদর্শন করেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অমিত হাজরা এবং বোলপুরের এসডিপিও রিকি আগরওয়াল।
তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আধিকারিকরা, শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের প্রতিনিধিরা এবং মেলার বিভিন্ন কমিটির সদস্যরা।
এই পরিদর্শনের মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশিকা ঠিকভাবে মানা হচ্ছে কি না, পাশাপাশি নিরাপত্তা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও পরিকাঠামোগত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা।
বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানান, পৌষ মেলা ও উৎসব বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং আদালতের নির্দেশ মেনে যাতে মেলা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। দর্শনার্থীদের সুবিধা, শৌচাগার, বায়ো টয়লেট, পানীয় জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবা নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, বোলপুরের এসডিপিও রিকি আগরওয়াল জানান, মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এ বছর আরও জোরদার করা হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে বসানো হয়েছে প্রায় ৩০০টি সিসি ক্যামেরা। এর পাশাপাশি স্থায়ী সিসি ক্যামেরাও রয়েছে।
মেলা মাঠ ও সংলগ্ন এলাকায় মোট ১০টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হচ্ছে এবং ৫টি ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমেও নজরদারি চালানো হবে।
সব মিলিয়ে প্রায় ২,৫০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন থাকবেন, যার মধ্যে রয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়ার্স, পুরুষ ও মহিলা পুলিশ কর্মী এবং আধিকারিকরা।
নিরাপত্তা তদারকিতে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিএসপি ও এসডিপিও পদমর্যাদার প্রায় ১৫ থেকে ১৬ জন আধিকারিক নিয়মিত নজরদারি চালাবেন।
কেপমারি, ইভটিজিং ও অন্যান্য অপরাধ রুখতে পুলিশের 'অ্যান্টি ক্রাইম টিম' ও একাধিক বিশেষ দল মোতায়েন থাকবে।
মেলা প্রাঙ্গণে খোলা থাকবে পুলিশের কন্ট্রোল রুম, যেখান থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে। মেলার ভিতরে ও বাইরে একাধিক পুলিশ সহায়তা কেন্দ্রও থাকবে।
যানজট এড়াতে মেলা ঢোকার রাস্তায় একাধিক 'ড্রপ গেট' বসানো হয়েছে। প্রতিটি প্রবেশপথে নির্দিষ্ট পার্কিং জোন করা হয়েছে। এ বছর প্রথমবার রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোন চিহ্নিত করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
এদিকে মেলা শুরু হওয়ার আগেই শান্তিনিকেতনে কার্যত উৎসবমুখর পরিবেশ। ৭ পৌষ, মঙ্গলবার সকাল সাতটায় শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী ছাতিমতলায় ব্রহ্ম উপাসনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে পৌষ উৎসব।
তার আগে বিশ্বভারতীর কলাভবনের পড়ুয়া ও অধ্যাপকরা আলপনার মাধ্যমে ছাতিমতলা প্রাঙ্গণ সাজিয়ে তুলেছেন। এ বছর পূর্বপল্লী মেলার মাঠে সাংস্কৃতিক মঞ্চ আরও বড় করে তৈরি করা হয়েছে, যা দেখে খুশি আউল, বাউল ও ফকিররা। ইতিমধ্যেই তাঁরা দলে দলে মেলা প্রাঙ্গণে পৌঁছতে শুরু করেছেন।
সোমবার সকাল থেকেই শান্তিনিকেতন জুড়ে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। প্রশাসনের দাবি, ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে।
সব মিলিয়ে উৎসবের আনন্দ, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা ও উৎসবকে সফল করতে তৎপর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। খুশির আবহে এখন গোটা শান্তিনিকেতন।