• 'ম্যাপিংটাই ভুল, এটা ব্লান্ডার', নেতাজি ইন্ডোরে মমতা
    আজকাল | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: এসআইআর চলছে রাজ্যে। ইতিমধ্যে খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এবার চলবে শুনানি পর্ব। এই পরিস্থিতিতে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের  বুথস্তরের এজেন্টদের নিয়ে বৈঠক করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। বক্তব্যজুড়ে তীব্র কটাক্ষ গেরুয়া শিবিরকে। একইসঙ্গে জানিয়ে দিলেন, চক্রান্ত করেও কিছু করতে পারবে না গেরুয়া শিবির। একইসঙ্গে কটাক্ষ করেন নির্বাচন কমিশনকেও।

    বক্তব্যের শুরুতে, এসআইআর প্রসঙ্গে আসার আগেই, মমতার মুখে মহাত্মা প্রসঙ্গ। এদিন তিনি বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, 'যারা জাতির নেতা গান্ধীজির নাম কেটে দেয়, তারা দেশকে কতটা  ভালবাসে সন্দেহ আছে।' কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে মহাত্মা'র নাম কেটে দেওয়ার পরেই যে, রাজ্যের প্রকল্পের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এদিন ফের সেকথাও মনে করান তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো, তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। একশ দিনের কাজের প্রসঙ্গও এদিন তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে। বলেন, 'কর্মশ্রী আমাদের ছিল। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়ে বলছে বাংলাকে জব্দ করবে। এত সস্তা!'

    তারপরেই আসেন এসআইআর প্রসঙ্গে। কলকাতা প্রসঙ্গে এদিন তথ্য তুলে ধরে কমিশন, গেরুয়া শিবিরকে একযোগে বিঁধে মমতা বলেন, 'কলকাতা জেলা আগে অন্যরকম ছিল। আগে ১০০টি ওয়ার্ড ছিল। এখন ১৪৪টি। ২০০৯ সালে ডিলিমিটেশন হয়েছিল। ইলেকশম কমিশন একবারও কি ভেবেছেন? ভ্যানিশ কুমার বাবুরা… বিজেপির দালালেরা একবারও ভেবেছেন? বিএলও-দের নামে গালাগালি দেওয়ার আগে ট্রেনিং দিয়েছিলেন? পুরোটাই অপরিকল্পিত। বিজেপির কথায় বিজেপি কমিশন করেছেন। আমাকে আপনারা ক্যাঁচকলা করবেন। যত কেস করবেন, করবেন। চাইলে গলাটাও কেটে নিতে পারেন। কিন্তু আমি মানুষের কথা বলব। কাউকে না কাউকে তো মুখ খুলতে হবে। সবাই যদি ভয়ে গুটিয়ে যায়, তা হলে তো দেশটাই শেষ হয়ে যাবে। বাংলা না থাকলে, দেশটা থাকবে না। মাথায় রাখবেন।'

    শেষ এসআইআর-এর প্রসঙ্গও এদিন উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। বলেন, '২০০১ সালে শেষ ইলেকশন হল। এর পরে আপনারা শুরু করলেন এসআইআর-এর কাজ। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হল ২০০৪ সালে। ২০০৪-এ লোকসভা নির্বাচন ছিল। আপনারা এর পরে ডিলিমিটেশন করেছিলেন। ডিলিমিটেশন মাথায় আছে কি নেই! যখন ডিলিমিটেশন হল, একটা ভোটার আর একটা নির্বাচনী ক্ষেত্রে চলে গেল। মানে আগে ভবানীপুরটা ছিল আলিপুর। এখন হয়ে গিয়েছে ভবানীপুর। যুক্ত হল অন্য নতুন ওয়ার্ড। সব বিধানসভাতে তাই হয়েছে। এই ভোটারের ঠিকানা ছিল এই ওয়ার্ড  চলে গিয়েছে ওই ওয়ার্ডে। ম্যাপিংটাই তো ভুল। আপনাদের ম্যাপিং সম্পূর্ণ ভুল। এটি গ্রেট ব্লান্ডার। ২০০২ সালের পরে যে ডিলিমিটেশন হয়েছিল, সেটি কি বিবেচনায় রাখা হয়েছিল?' 

    পয়েন্ট ধরে ধরে তিনি আরও বলেন, 'একজন ভোটার ২০০২ সালে কোনও ঠিকানায় ছিলেন। আজ সেই ঠিকানায় নেই। থাকবেন কী করে! তিনি তো অন্য ওয়ার্ডে চলে গিয়েছেন। বিয়ের পরে মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি চলে যায়। কেউ পদবি পরিবর্তন করে, কেউ করে না। যারা পরিবর্তন করেছে, তাদের আপনারা বাদ দিয়ে দিচ্ছেন। কোন কারণে! তারা বৈধ ভোটার। কেউ বাবা-মায়ের নাম লিখতে গিয়ে ‘এ’-র জায়গায় ‘ই’ লিখেছে। বাংলায় যেটা ‘আ’ হয়, ইংরেজিতে সেটা ‘ডবল এ’ হয়।'

    ভাষার ব্যবহার নিয়েও তিনি এদিন তীব্র আক্রমণ শানান, বলেন, ' তোমরা  ভোটার লিস্টিং করেছ কলকাতার আশেপাশে সব ইংরেজিতে। একটা রাস্তার হকার, দোকানদার,  গরিব মানুষ, বস্তির মানুষ, একটা মহল্লার মানুষ, কলোনির মানুষ, তোমার ইংরেজিটা বুঝবে কীভাবে।' তিনি একেবারে নাম ধরে, উদাহরণ দিয়ে বলেন, আরও বলেন, 'ধরুন বাংলায় নাম হল একতা। ইংরেজিতে কেউ এ ব্যবহার করে, কেউ ই ব্যবহার করে। তুমি সেটা দেখেও নাম কেটে দিয়েছ! এর জন্য তো তাকে আত্মহত্যা করতে হল। এর দায় কার!' নির্বাচন কমিশনকে একহাত নিয়ে মমতা  ব্যানার্জি এদিন বলেন, 'নির্বাচন কমিশন ৪৬ জন লোকের প্রাণ নিয়েছো। বিএলও-দের দোষ নয়, দোষ তোমাদের। দায়িত্ব নিতে হবে।' 

    তৃণমূল কংগ্রেস  সুপ্রিমো এদিন বলেন, 'সর্বক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।' তারপরেই বলেন, 'বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লজিক্যাল ডিসক্রিপেন্সির জন্য, অ্যাপের পরিবর্তনের ফলে সামগ্রিক ভাবে কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। ২২-২৪ বার কমিশন নির্বাচন কমিশন নির্দেশ চেঞ্জ করছে।' বিজেপিকে কালপ্রিট বলেও এদিন সুর চড়ান। ভিন রাজ্য থেকে এই রাজ্যে আগতদেরও এদিন বার্তা দেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো।  
  • Link to this news (আজকাল)