অয়ন ঘোষাল: হুমায়ুনের দলের আত্মপ্রকাশ! ছাব্বিশের আগে বাংলায় নয়া রাজনৈতিক দল। হুমায়ুনের নতুন দল জনতা উন্নয়ন পার্টি। সবুজ-হলুদ-সাদা, দলের পতাকা প্রকাশ হুমায়ুনের। প্রকাশিত জনতা উন্নয়ন পার্টির ইস্তাহার। এছাড়াও দলের সভাস্থলে মিমের প্রতিনিধি দল।
স্টেজে উঠেই তৃণমূলকে তোপ দাগলেন হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, 'প্রায় একমাসের অপেক্ষা। ৪ তারিখ আমাকে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দলের কলকাতার মেয়রকে দিয়ে আমাকে সাসপেন্ড করিয়েছে। আমাকে বলেছিল ও মসজিদ বানাচ্ছে কেন? ফিরহাদ হাকিম এর মা হিন্দু ছিলেন। মা হিন্দু। বাবা মুসলিম। তাই ফিরহাদ হাকিম একজন আধা মুসলমান। আমি নিজে একসময় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য ছিলাম। আমার বাড়ি থেকে কীর্নাহারের দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। উনি বাড়ির পুজোয় আমাকে আমন্ত্রণ জানাতেন। প্রণব মুখোপাধ্যায় বলতেন হুমায়ুন এসেছিস না খেয়ে যাবি না। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায় আমার বাড়িতে এসেছেন। প্রণব মুখোপাধ্যায় আমার বাড়িতে এসেছেন। অধীর চৌধুরী আমার বাড়িতে এসেছেন। সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে দিয়ে আমি এই জেলায় রাজনীতি করতাম। আমি কংগ্রেসের ৫ টা পোর্টফোলিও হোল্ড করতাম। আমি যখন কংগ্রেস ছাড়লাম তখন অধীর বাবুর পরিবার আমার জাত তুলে কথা বলেছিল। মুকুল রায় আর গৌতম সান্যাল আমাকে তৃণমূলে নিয়ে আসেন।'
তিনি আরও বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনি মানুষকে USE AND THROW করে দেন। আপনি বলুন আমি আপনার সঙ্গে কি গাদ্দারি করেছি? বলুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর আপনি আমার সঙ্গে কী করেছেন? সেটাও বলুন। লোকাল নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মমতা জিজ্ঞাসা করলেন হুমায়ুনকে বাদ দিলে দলের কোনো ক্ষতি হবে? ওরা বলল না না কোনো ক্ষতি নেই। বাদ দিন। উনি বাদ দিলেন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি হুমায়ুন কবীর বেঁচে থাকলে ২৬-এর ভোটে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলকে জিরো করব। জিরো জিরো জিরো।'
'বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর বেঁচে নেই। তাঁর একটা মাত্র মেয়ে। বালিগঞ্জ এলাকায় একটা ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকেন। মমতা আপনি নাকি সততার প্রতীক। আপনি বলুন আপনার আগে কত সম্পত্তি ছিল? পরিবারের সদস্যদের আগে কত সম্পত্তি ছিল? আপনি যেদিন মুখ্যমন্ত্রী হলেন সেদিন বাংলার মানুষের মাথাপিছু আয় কত ছিল? আপনি মেলা খেলা উৎসব রঙ তামাশা করে বাংলার মাথায় ঋণের বোঝা চাপিয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারী আপনাকে বলছি মুসলিম বিধায়কদের নাকি চ্যাংদোলা করবেন? আমি চ্যালেঞ্জ করছি আমার ১০০ বিধায়কের মধ্যে ৩০ জন হিন্দু বিধায়ক থাকবে। দেখি আপনি কতবড় পালোয়ান। ফেলুন তো দেখি চ্যাংদোলা করে। আপনার বাবা শিশির বাবুর ক্ষমতা নেই কিছু করার।' বাবা তুলে শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ হুমায়ুনের।
'রাজ্যের কোনো মসজিদে মা দরগা ময়দানে ১০ বছরের বেশি বয়সী মহিলার যাওয়ার অধিকার নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনি রেড রোডে যান কেন? আপনি মুসলমানদের মূর্খ ভাববেন না। তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। আপনি যতই আই প্যাক কাজে লাগান। শত্রুঘ্ন সিনহা, ইউসুফ পাঠান, কীর্তি আজাদ বাঙালি?
'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনি আমার বিরুদ্ধে বেশি কথা বলবেন না। তাহলে আমি আপনার পরিবারের আয়ের উৎস ফাঁস করে দেব। আপনার ক্ষমতা চলে গেলে দেখব আপনার এই পুলিস কোথায় থাকে। আমার সভায় একজন আসার কথা ছিল। ববি হাকিম ভয় দেখিয়েছে। ববি, আপনার ক্ষমতা আমি ব্রিগেডের দিন দেখিয়ে দেব। নর্মালি আমি ঠান্ডা মাথার লোক। আমাকে রাগাবেন না। ২০০৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের মাত্র ১টা সাংসদ। তাও ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় এল। আপনার ২৩০ বিধায়ক তুড়ি মেরে ওড়াব। আপনার সরকার চিৎপটাং হয়ে যাবে। হুমায়ুন কবীর অঙ্ক কষে চলে। তৃণমূল কংগ্রেসের বালি পাথর চোরদের বুঝে নেব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি সতী সাবিত্রী। তোলাবাজির হিস্যা কোথায় যায়? কার কাছে যায়? এপ্রিল মাসে এখানে এসে উনি বললেন ওয়াকফ নিয়ে কাউকে আন্দোলন করতে দেব না। দিল্লি যান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আপনার মুসলমানদের প্রতি এত তাচ্ছিল্য? রেড রোডে নামাজ পড়লে হবে না। আগামী ঈদের দিন আমার বাবরি মসজিদে কত লোক আসে দেখিয়ে দেব। রেড রোডে কত লোক হবে আর আমার এখানে কত লোক হবে মিলিয়ে দেখে নেবেন।'
'বাংলার কোনও থানা যদি আমার নামে মিথ্যা মামলা করে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে থানার ইট খুলে নেব। পারলে আটকে দেখান। তৃণমূলের একটা মহাসচিব ছিল—পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জেল খেটে এসে বলছে, অপা কে ছাড়ব না। ২০২৬ সালের গণনার দিন বুঝতে পারবে আদার ঝাঁঝ কতটা। আমি হুমায়ুন কবীর। আমার হারানোর কিছু নেই। মিডিয়া, আপনারা আজকের সভার রেকর্ডিং আর্কাইভ করে রাখবেন। ফল প্রকাশের দিন টেলিকাস্ট করবেন।'
এরই মধ্যে জানা গিয়েছে, জানুয়ারি মাসে ব্রিগেড সমাবেশের ঘোষণা হুমায়ুনের। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে যেকোনও একদিন ব্রিগেড সমাবেশ। সেনার অনুমতি লাগবে। বাধা দেওয়ার চেষ্টা হবে। অনুমতি পেলেই ব্রিগেড সমাবেশ করবেন বলে জানিয়েছেন হুমায়ুন। এর পাশাপাশি সুন্দরবন এডুকেশনাল ট্রাস্ট নতুন পার্টি ফান্ডে ৩৫ কোটি টাকা দিল।
দল ঘোষণার দিনই প্রার্থী ঘোষণা, চমক হুমায়ুনের। হুমায়ুনের ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে ২ জন হিন্দু মহিলা। বালিগঞ্জে লড়বেন নিশা চট্টোপাধ্যায়। মুর্শিদাবাদ বিধানসভায় প্রার্থী মনীষা পান্ডে। হরিরামপুর বিধানসভায় প্রার্থী ওয়াহিদুর রহমান। বৈষ্ণবনগর মুসকেরা বিবি, খড়গপুর গ্রামীণ হাজি ইবরার হোসেন। সবথেকে বড় চমক- ৪ জন হুমায়ুন কবীরের প্রার্থী ঘোষণা। একাধিক হুমায়ুন কবিরকে সামনে এনে নতুন দল ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের। রেজিনগর ও বেলডাঙায় লড়বেন স্বয়ং হুমায়ুন কবীর। ড. হুমায়ুন কবীর নামে দলের আরেক নেতা প্রার্থী হবেন রানিনগর কেন্দ্রে। ভগবানগোলা বিধানসভায় প্রার্থী হবেন এক ব্যবসায়ী, তাঁর নামও হুমায়ুন কবীর। ৪ কেন্দ্রে প্রার্থী ৩ হুমায়ুন কবীর। রামপুর হাট থেকে আরও এক হুমায়ুন কবির ভোটে লড়তে পারেন। হুমায়ুনের ছড়াছড়ি দলে।
অন্যদিকে, ৭৫-এর বদলে দেড়শো জনের রাজ্য কমিটি ঘোষণা। দলের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর। ভাইস প্রেসিডেন্ট হাসনাত আলি, প্রকাশ রঞ্জন শ্রীবাস্তব, রাকেশ রঞ্জন শ্রীবাস্তব, দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য-- এরা সবাই ভাইস প্রেসিডেন্ট। মোট ১৩ জন ভাইস প্রেসিডেন্ট।