রেললাইনে হাতির দুর্ঘটনা এড়াতে খোলা হবে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, নির্দেশ কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রীর
প্রতিদিন | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
নিরুফা খাতুন: দুর্ঘটনা রুখতে রেলের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর পাশাপাশি রাজ্য বনদপ্তরকে সক্রিয় হতে নির্দেশ দিলেন কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রক। হাতির দিনের গতিবিধি মনিটরিং করতে পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে ডিভিশন ফরেস্ট অফিসারদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলার নির্দেশ দিয়েছেন। রেললাইন সংযোগ রয়েছে এরকম রুট, যেখানে হাতির দলের আনাগোনা লেগে থাকে সেই রুটে লোকো পাইলটদের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব।
ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ ওড়িশা, অসম, ঝাড়খণ্ড ও বাংলাদেশ মিলিয়ে হাতিদের ১১০০টি হটস্পষ্ট চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে রেললাইনে সংযোগ রয়েছে। রবিবার সুন্দরবনের গোসাবায় ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথিরিটির বৈঠক করেন বনমন্ত্রী। এদিন প্রোজেক্ট এলিফ্যান্টের ২২ তম স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকও করা হয়। এর আগে হাতি নিয়ে একাধিক রাজ্যে বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রক। সম্প্রতি অসমে ট্রেন দুর্ঘটনায় আটটি হাতি কাটা পড়ে।
সেই প্রসঙ্গে এদিন মন্ত্রী বলেন, ‘‘এই ঘটনায় রেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। হাতির পালের আনাগোনা হয় এরকম ১১০০টি হটস্পষ্ট চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে রেললাইন সংযোগ রয়েছে। এইসব হটস্পষ্ট এলাকাগুলিতে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসাররা পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে হোয়টসঅ্যাপ গ্রুপ খুলবেন। সেখানে হাতিদের গতিবিধির আপডেট দিতে হবে। এছাড়া লোকো পাইলটদের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে হবে।’’ হাতিদের গতিবিধি লোকো পাইলটদের জানাতে হবে। হাতিদের সংঘাত এড়াতে রাজ্য সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে বলে তিনি জানান।
যদিও বাংলায় হাতিদের গতিবিধি নিয়ে রাজ্য বনদপ্তরের একাধিক হোয়টসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। হাতি ও মানুষের সংঘাত এড়াতে ডিএফও, এসপি এবং রেঞ্জ আধিকারিকদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। রেঞ্জ আধিকারিক ও জেএফএমসিদের নিয়েও আলাদা গ্রুপ রয়েছে। রেলের সঙ্গে ডিএফও এবং রেঞ্জ আধিকারিকদের নিয়ে খোলা হয়েছে হোয়টসঅ্যাপ গ্রুপ। রেল দুর্ঘটনা পাশাপাশি বিদ্যুৎস্পৃষ্টেও হাতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে।
বিপজ্জনক তার সরাতে বিদ্যুৎদপ্তরের ডিভিশনাল ম্যানেজারদের সঙ্গে বনদপ্তরের আলাদা একটি হোয়টসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। বছরে একবার করে রেল ও বিদ্যুৎদপ্তরের বৈঠক করে থাকে রাজ্য বনদপ্তর। লোকালয়ে হাতি ঢুকে পড়া রুখতে জঙ্গলে খাবারের বন্দোবস্ত করার কথা জানান মন্ত্রী। রাজ্য বনদপ্তর সূত্রে খবর, দক্ষিণবঙ্গে লালগড়, তপোবন, বেলিয়াতোড়, বড়জোড়া, সোনামুখীর জঙ্গলে হাতির খাবারের জন্য বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গে বক্সা, জলদাপাড়া, গরুমারা ও দার্জিলিং ওয়াল্ড লাইফ ডিভিশনেও জঙ্গলে গাছ লাগানো হচ্ছে। জঙ্গলে জলাশয়ের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
এনটিসিএ-র ফান্ড আগে কেবলমাত্র বাঘের জন্য বরাদ্দ হত। এখন সেখানে হাতির জন্যও অর্থ বরাদ্দ করা হয়। কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রী জানান, গত পাঁচ বছরে হাতির জন্য ক্যাম্প প্রকল্পে ৩৪৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ১১২ কোটি সুন্দরবন ও সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। সুন্দরবন উন্নয়ন নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, সুন্দরবনে যে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। এখানে বহু জায়গা জবরদখল হয়ে রয়েছে। চরম অব্যবস্থাপনা। যার জন্য সুন্দরবনে পর্যটক কম আসছে। এমনকী সুন্দরবন ও সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে তার অধিকাংশ টাকা রাজ্য বনদপ্তর ব্যবহার করছে না বলেও দাবি করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এ ব্যাপারে রাজ্যের বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর কোনও উত্তর মেলেনি।