রেনকোজি মন্দিরের ‘চিতাভস্ম’ কার? জাপানের মন্দির ট্রাস্টকে চিঠি গবেষকের
প্রতিদিন | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: জাপানের রেনকোজি মন্দিরে (Renkoji Temple) নেতাজির নাম করে রাখা চিতাভস্ম কার? জানতে মন্দির কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিচ্ছেন কলকাতার দুই গবেষক।
বিশ্বের একটা বড় অংশের কাছে সেই চিতাভস্ম ১৯৪৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তাইহোকু বিমানবন্দরে বিমান দুর্ঘটনায় ‘মৃত’ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুরই বলে বিশ্বাস। বসু পরিবারের একটি অংশও সেই একই দাবি করেছে। সম্প্রতি নেতাজির স্বঘোষিত কন্যা অনিতা পাফ তাঁর ‘বাবা’র চিতাভস্ম বলে দাবি করে তা ভারতের ফেরানোর দাবি করেছেন। কিন্তু বিশ্বের তামাম গবেষকদের আরও একটি অংশের দাবি, ১৯৪৫ সালে ওই তারিখে তাইহোকুতে কোনও বিমান দুর্ঘটনাই ঘটেনি। গবেষকদের বড় একটি অংশ এর স্বপক্ষে নানা প্রমাণও দাখিল করেছেন। কলকাতার দুই গবেষক সৈকত নিয়োগী ও সৌম্যব্রত দাশগুপ্ত ইতিমধ্যে একাধিক তথ্যপ্রমাণ বিশেষ করে তাইওয়ান রিপোর্ট সামনে এনে জানিয়েছেন, ওই দিন ওই তারিখে কোনও বিমান দুর্ঘটনাই ঘটেনি। সম্প্রতি অনিতার দাবি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে শহরে একটি সভার আয়োজন করেছিল সৈকত-সৌম্যরা। ছিলেন নেতাজির মেজদা শরৎচন্দ্র বসুর বড় ছেলে অশোকনাথ বসুর কন্যা জয়ন্তী রক্ষিত, নেতাজি অনুগামী ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক জি দেবরাজন, আজাদ হিন্দ ফৌজের সিক্রেট সার্ভিসের অন্যতম যোদ্ধা বিপ্লবী পবিত্র মোহন রায়ের পুত্র রণেন্দ্রমোহন রায়, বিচারক তথা লেখক বিপ্লব রায়, প্রবীণ সাংবাদিক তরুণ গোস্বামী প্রমুখ।
অনিতা পাফ ভারত সরকারের কাছে দাবি করেছেন, জানুয়ারি মাসে অর্থাৎ নেতাজির জন্মের মাসেই তাঁর তথাকথিত চিতাভস্ম দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। যার প্রেক্ষিতে সৈকত-সৌম্যর প্রশ্ন, “তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনা যেখানে রহস্যে মোড়া, এমনকী, তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি বলেই তাইওয়ান রিপোর্টের মতো প্রামাণ্য তথ্য রয়েছে, সেখানে কীসের ভিত্তিতে নেতাজির স্বঘোষিত কন্যা অনিতা পাফ দাবি করলেন রেনকোজির ওই চিতাভস্ম সুভাষবাবুর? আমরা মনে করি এটা একটা ষড়যন্ত্র। সেই কারণেই আমরা সরাসরি রেনকোজি মন্দির ট্রাস্টের কাছে এ নিয়ে জানতে চাইছি।” শুধু রেনকোজি মন্দির (Renkoji Temple) ট্রাস্ট নয়, ওই মন্দির জাপানের যে শহরে সেই সুগনামি সিটির পুর-কর্তৃপক্ষকেও একইসঙ্গে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
দেবরাজন ওই প্রতিবাদ সভায় জানিয়েছেন, নেতাজির চিতাভস্ম দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া ‘ষড়যন্ত্র’। তেমন কিছু হলে তীব্র প্রতিবাদ হবে। তিনি জানিয়েছেন, “দক্ষিণ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও নেতাজির সহযোদ্ধা মথুরামলিঙ্গম থেবর ১৯৫০ সালে সংসদে ঘোষণা করেছিলেন তিনি ‘নেতাজির সঙ্গে ৪০ দিন কাটিয়ে এসেছেন চিনে’। সেই ঘোষণা সমগ্র ভারতকে আন্দোলিত করেছিল।” নেতাজির নাতনি জয়ন্তী রক্ষিতও তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছেন, “নেতাজির তথাকথিত চিতাভস্ম ভারতে আনার চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে।”
চিতাভস্ম নিয়ে অনিতার দাবির পর তিনিই যে প্রকৃতই নেতাজি-কন্যা তার প্রমাণ চেয়েও সৌম্য-সৈকতরা চিঠি দিচ্ছেন অস্ট্রিয়ার অগ্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়কে। কেন অগ্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়? কারণ তাদের প্রোফাইলে অনিতা পাফকে নেতাজি এবং এমিলি সেঙ্কেলের কন্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সৈকত এখানে দুটি স্ব-বিরোধী তথ্য সামনে রাখছেন। জানাচ্ছেন, নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো দাবি করেছে ১৯৪২ সালে এমিলি সেঙ্কেলের সঙ্গে নেতাজির বিয়ে হয়েছিল। সেখানে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ যা এক সময় ‘অফিস অফ স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিস’ নামে পরিচিত ছিল, তারা ১৯৪৩ সালের একটি তথ্য উল্লেখ করে তার পরের বছর একটি রিপোর্টে সেঙ্কেলকে ‘মিস’ বলে সম্বোধন করে জানাচ্ছে, সুভাষচন্দ্রের স্টেনোগ্রাফার হিসাবে এমিলি তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। সৈকতের প্রশ্ন, “এটা কীভাবে সম্ভব? যদি দুজনের বিয়ে না-ই হয়ে থাকে তাহলে অনিতাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রোফাইলে নেতাজি আর সেঙ্কেলের কন্যা বলে দাবি করছে কীভাবে?”