লাগেজ নিয়ে শিলিগুড়ি বা এনজেপি স্টেশনে নামলেন। হাল্কা জলখাবার খেয়ে এ বার পাহাড়ে ওঠার পালা। কুয়াশা ঘেরা সর্পিল রাস্তায় গড়গড়িয়ে এগিয়ে চলবে গাড়ি। ‘খাদের ধারের রেলিংটা’ গুনগুন করতে করতে আপনি ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত। সমতল থেকে পাহাড়ের এই ‘স্মুথ জার্নি’তে কি এ বার ছেদ পড়বে? পর্যটকদের চিন্তা বাড়িয়ে বিরোধ বাড়ল পাহাড় ও সমতলের গাড়ি চালকদের। ঠান্ডা লড়াইটা ছিল অনেক আগে থেকেই। এ বার বিরোধ। সমতলের গাড়ি চালকরা জানিয়েছেন, সোমবার থেকে তাঁরা পাহাড়ের চালকদের শিলিগুড়ি থেকে যাত্রী তুলতে দেবেন না। সমাধান সূত্র খুঁজতে মঙ্গলবার জিটিএ চিফ, পাহাড়ের পরিবহণ আধিকারিকদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে।
শিলিগুড়িতে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন, বাগডোগরা, শিলিগুড়ি জংশন এবং দার্জিলিং মোড় থেকে পাহাড়ের চালকেরা যাত্রী তুলতেন। এর বাইরে আগাম বুকিং থাকলে শহরের নানা হোটেল থেকেও যাত্রী তুলতেন তাঁরা। এ বার সমতলের চালকেরা বাধা দিলে আইন শৃঙ্খলার সমস্যা জটিল আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে রবিবার রাতে দার্জিলিংয়ের হোটেল ব্যবসায়ীদের এক বিজ্ঞপ্তি জারিকে কেন্দ্র করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে হোটেল ব্যবসায়ীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পর্যটকদের টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখাতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাঁরা নিতে পারবেন না। পর্যটকদের নিজেদের উদ্যোগে সূর্যোদয় দেখতে যেতে হবে। পাহাড়ের চালকেরা আগেই জানিয়ে দেয়, তাঁরা টাইগার হিলে আর পর্যটকদের নিয়ে যাবেন না।
পাহাড়ের চালকদের দীর্ঘদিনের দাবি, সমতলের চালকদের একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে পর্যটকদের নামিয়ে চলে আসতে হবে। পাহাড়ের অন্যান্য পর্যটন স্থানগুলিতে পর্যটকদের ঘোরাবেন শুধুমাত্র পাহাড়ের গাড়ি চালকরাই। বর্তমানে টাইগার হিল, রক গার্ডেন বা পিস প্যাগোডার মতো স্থানগুলিতে সমতলের চালকরাও পর্যটকদের ঘোরাতে নিয়ে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পাহাড়ের চালকদের রুটিরুজিতে টান পড়ছে বলে দাবি। জিটিএ’র পক্ষ থেকে অবশ্য পাহাড়ের চালকদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে।
সমতলের চালকের দাবি, পাহাড়ে উঠলেই নির্জন, ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। সমতলের চালক সংগঠনের পক্ষে দেবাশিস মৈত্র বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে পাহাড়ের চালকদের কেবল সমতল থেকে যাত্রী তুলতে দেওয়া হবে না। পাহাড় থেকে যাত্রী নামিয়ে আনতে পারবেন। তবে সমতলের চালকদের হেনস্থা বন্ধ না-হলে যাত্রী নামানোও বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা পাহাড়ের চালকদের সঙ্গে বিরোধিতা চাইনি। পাহাড়ের চালকদের একাংশ আমাদের এই পথে নামতে বাধ্য করল।’