বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে পালিয়ে দেশে ফিরলেন ভারতীয় শিল্পী
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
সেই ছায়ানটেই অনুষ্ঠান করার কথা ছিল আলাউদ্দিন খানের বংশধর সরোদিয়া সিরাজ আলি খানের। তবে হাদির মৃত্যু এবং দেশজুড়ে অরাজক পরিস্থিতির কারণে সিরাজ প্রাণ বাঁচাতে তড়িঘড়ি বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন। দেশের ভেতরে ভারতীয় পরিচয় লুকিয়ে ফিরতে বাধ্য হন তিনি। তবে দেশে ফিরেও আতঙ্ক এখনও পুরোপুরি কাটেনি তাঁর।
জানা গিয়েছে, সিরাজ ঢাকায় পৌঁছন গত ১৬ ডিসেম্বর। ১৭ ডিসেম্বর বনানীতে ‘জ্যাজ কনসার্ট’ আয়োজন করেন তিনি। দুই দিন পর ছায়ানটের মঞ্চে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু হাদির মৃত্যু এবং দেশজুড়ে অরাজকতা তার সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়। বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, ভারতীয় দূতাবাস এবং আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা হয়। চট্টগ্রামে খুন হন এক সাংবাদিক এবং দীপু চন্দ্র দাস নামের হিন্দু যুবককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই সময়ে ছায়ানটেও হামলা চালানো হয়।
সিরাজ জানান, পরিস্থিতি দেখে কার্যত তিনি দিশাহারা হয়ে পড়েন। প্রাণ বাঁচাতে পরিস্থিতি বুঝে ভারতীয় পরিচয় লুকিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন এই শিল্পী। ঢাকার বিমানবন্দরে আঞ্চলিক ভাষা তার রক্ষা করে। সিরাজের বক্তব্য, ‘আমার মায়ের জন্ম ব্রাহ্মণবেড়িয়ায়। মায়ের কাছ থেকে ওই অঞ্চলের ভাষা শিখেছি। বিপদের সময় তা ঢাল হিসাবে কাজ করেছে।’ গাড়ির ড্যাশবোর্ডে ভারতীয় পরিচয়পত্র লুকিয়ে রাখেন ড্রাইভার।
সিরাজ আলি খান বলেন, ‘কোনও সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হতে পারে, তা চিন্তার বাইরে ছিল। পরের দিন গিয়ে দেখলাম, প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে পোড়া, ভাঙাচোরা বাদ্যযন্ত্র দেখতে পেয়েছিলাম। অসাবধানতায় একটি বাদ্যযন্ত্রে পা ঠেকলে সঙ্গে সঙ্গে সরস্বতীর কাছে ক্ষমা চেয়েছি।’ তিনি আরও জানান, ‘খান পদবি এবং বংশক্রম দেখে সবাই বিশ্বাস করেছেন আমি বাংলাদেশের। তবে ভারতের মাটিতে এলেও চিন্তামুক্ত নই। কারণ আমার মা এবং অনেক বাদ্যযন্ত্রী এখনও পদ্মাপারে রয়েছেন।’
এই ঘটনায় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পীদের নিরাপত্তার প্রতি গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দেশের এই অরাজক অবস্থা শুধু সাধারণ মানুষকে নয়, সঙ্গীতশিল্পী ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলিকেও বিপন্ন করেছে।