জঙ্গিপুরে হরগোবিন্দ ও চন্দন খুনে দোষী সাব্যস্ত ১৩ জন অভিযুক্তই
বর্তমান | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: সামশেরগঞ্জের বৃদ্ধ হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর ছেলে চন্দন দাসকে খুনের অভিযোগে ধৃত ১৩ জনকেই দোষী সাব্যস্ত করল জঙ্গিপুর মহকুমা আদালত। সোমবার দুপুরে অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অমিতাভ মুখোপাধ্যায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করেন। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, অপরাধীদের সকলের বাড়ি সামশেরগঞ্জ থানা এলাকায়। আজ, মঙ্গলবার অপরাধীদের সাজা শোনাবে আদালত। সরকারি আইনজীবী সমীরকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মাননীয় বিচারক এই মামলার অপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত করেছেন। মঙ্গলবারেই অপরাধীদের সাজা শোনাবে আদালত।
চলতি বছরে এপ্রিল মাসে দেশে ওয়াকফ বিল আইনে পরিণত হয়। আইন বাতিলের দাবিতে সর্বত্র বিক্ষোভ শুরু হয়। সামশেরগঞ্জে গত ১১ এপ্রিল দুপুরে ওই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমে সেই বিক্ষোভ হিংসাত্মক রূপ নেয়। দোকানপাট ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয় একদল উন্মত্ত মানুষ। ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এলাকায় তাণ্ডব চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় পুলিশকে। ওইদিন সন্ধ্যায় এলাকায় কারফিউ জারি হয়। রাত ভোর হতেই ফের অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। ১২ এপ্রিল সকালে জাফরাবাদ গ্রামেও অশান্তির আঁচ লাগে। জনা কয়েক দুষ্কৃতী হরগোবিন্দ দাসের বাড়িতে হামলা চালায়। বৃদ্ধ হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর ছেলে চন্দন দাসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হয়। বাবা ও ছেলে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। তারপর দুষ্কৃতীরা সেখান থেকে বহাল তবিয়তে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানেই বাবা ছেলে বেশ কিছুক্ষণ পড়ে থাকেন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খুনের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আনতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে প্রশাসন। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য সিট গঠন করে রাজ্য সরকার। তদন্তে নেমে খুনের ঘটনায় জড়িত ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই ধৃতরা জেল হেপাজতে ছিল। এদিন সেই ১৩ জনকেই দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
হিংসার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে সামশেরগঞ্জে এসে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করেন ও তাঁদের খোঁজ নেন। তাঁদের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন। যদিও নিহত হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের পরিবারের সদস্যরা কেউ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেননি। সরকারি অনুদানও গ্রহণ করেননি। মৃত হরগোবিন্দ দাসের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।