নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: ‘দিস ইজ টেরিবল। হাউ আর ইউ ব্রিদিং হিয়ার?’- শিবপুরের এজেসি বোস ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেনের সামনে দাঁড়িয়ে এমনই বিস্ময় মিশ্রিত প্রশ্ন ছুড়ে দেন আমস্টারডাম থেকে আসা এক বিদেশি দম্পতি। তাঁদের এই প্রতিক্রিয়ার নেপথ্যে বি গার্ডেনের মূল প্রবেশপথ সংলগ্ন রাস্তার আবর্জনা ও দূষণের ছবি। রাস্তার একাংশে ধস নেমে তৈরি হয়েছে বড়ো গর্ত, এখন সেই গর্তই হয়ে উঠেছে গোটা এলাকার নোংরা ফেলার ডাম্পিং জোন। স্তূপীকৃত আবর্জনার তীব্র দুর্গন্ধে নাজেহাল স্থানীয় বাসিন্দারা। একইসঙ্গে এই বেহাল চিত্রে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে বি গার্ডেন কর্তৃপক্ষ।
বি গার্ডেন মেইন রোডের পাশেই রয়েছে উদ্যানের মূল গেট। ঠিক তার উলটোদিকে থাকা দু’টি ভ্যাট দীর্ঘদিন ধরেই ভাঙা। ওই ভ্যাটের নীচে দিয়েই গিয়েছে সিইএসসির বিদ্যুৎবাহী তার, যা নিয়ে বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে রাস্তার ওই অংশ ধসে যাওয়ায় ভ্যাটের সামনেই তৈরি হয়েছে বড়ো গহ্বর। তার জেরে ভ্যাটের প্রাচীর ভেঙে গেলেও আজ পর্যন্ত রাস্তা কিংবা ভ্যাট, কোনওটাই মেরামত করা হয়নি। অভিযোগ, সেই গর্তের মধ্যেই প্রতিদিন আবর্জনা ফেলছে আশপাশের বাসিন্দারা। স্থানীয়দের কথায়, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে ভ্যানে এনে এখানে জড়ো করা হয়। ফলে সকাল থেকেই রাস্তার মাঝ বরাবর ছড়িয়ে পড়ে সেই আবর্জনা। আবর্জনার টানে সেখানে ভিড় করছে গবাদি পশুও। দক্ষিণ হাওড়ার এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দিয়ে সারাদিন টোটো, অটো, বাইক ও গাড়ি অবিরাম যাতায়াত করে। কাছেই রয়েছে বারাসত-বি গার্ডেন বাসস্ট্যান্ড। ওই স্ট্যান্ড থেকেই ছাড়ে বি গার্ডেন-ধর্মতলা ৬ নম্বর রুটের মিনিবাস। ভ্যাটের এই করুণ অবস্থার কারণে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তীব্র যানজট হয় বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছে, ওই জায়গা থেকে ভ্যাট সরানোর দাবিতে বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। হাওড়া পুরসভার কাছে একাধিকবার লিখিত আবেদন জমা দিলেও বাস্তবে কোনও পরিবর্তন আসেনি। তুহিন মাজি, আরতি মাজি, লক্ষ্মী নাহার কথায়, ‘দুর্গন্ধে এলাকায় থাকা দায়। রবিবার আবর্জনা পরিষ্কার হয় না। ফলে সোমবার সকালে রাস্তার কী দশা হয়, তা সহজেই বোঝা যায়।’ এই পথ দিয়েই প্রতিদিন বহু দেশি-বিদেশি পর্যটক বি গার্ডেনে ঢোকেন। শনিবার ওই বিদেশি দম্পতি আবর্জনার স্তূপ দেখে কার্যত হতবাক হয়ে পড়েন। তাঁরা বলেন, ‘যেখানে প্রকৃতি সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তার পাশেই এমন দূষণ কল্পনাতীত।’
এ প্রসঙ্গে হাওড়া পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, ভ্যাট নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। তবে রাস্তার বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে। অন্যদিকে বি গার্ডেনের জয়েন্ট ডিরেক্টর দেবেন্দ্র সিং বলেন, ‘প্রশাসন যদি রাস্তার হাল ফেরায়, তাহলে আমরা সেখানে সবুজায়নের উদ্যোগ নিতে পারি। এমন প্রস্তাব আগেও দিয়েছিলাম, কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’ নিজস্ব চিত্র