নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পাঁচদিন রেকি করার পর দমদমের সিঁথিতে সোনার গয়না তৈরির কারখানায় দিনেদুপুরে ডাকাতি করে দুষ্কৃতীরা। কোটি টাকার সোনা হাতিয়ে বৃদ্ধ মালিককে খুন করে চম্পট দেয় তারা। কলকাতা পুলিশ ও বারাকপুর কমিশনারেটের সীমানায় অবস্থিত এলাকায় চাঞ্চল্যকর কাণ্ড ঘটেছিল ৫ অক্টোবর। এরপরই বহু স্বর্ণ বিপণি ও কারখানা সংলগ্ন এলাকায় আতঙ্ক বাড়ে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কলকাতা পুলিশ ও বারাকপুর কমিশনারেটের কাছে নিরাপত্তা বৃদ্ধির আর্জি জানায়। সেকথা মাথায় রেখে দমদম স্টেশন, বেদিয়াপাড়া, সিঁথি, বিধান পার্ক ৩০এ বাসস্ট্যান্ড সহ গোটা চত্বরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভোলবদলের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। গোটা এলাকায় যৌথ পরিদর্শন চালিয়েছে কলকাতা ও বারাকপুর পুলিশ। নজরদারি বাড়াতে তৈরি হচ্ছে পুলিশ কিয়স্ক। যানবাহন ট্র্যাকিংয়ে ইনস্টল করা হচ্ছে অটোমেটিক নম্বরপ্লেট রেকগনিশন (এএনপিআর) ক্যামেরা সহ একাধিক উন্নতমানের সিসি ক্যামেরা।
ঘটনার দিন বরানগর থানা এলাকার শম্ভুনাথ দাস লেনের সোনার কারখানায় হানা দেয় পাঁচ দুষ্কৃতী। দোকানের মালিক শঙ্কর জানাকে খুন করে লুটপাট চালায় তারা। অভিযুক্তদের ভিন জেলা থেকে পাকড়াও করে জিজ্ঞাসাবাদ করে বারাকপুর পুলিশ। তা থেকেই তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, গোটা এলাকার রেকি করেছিল তারা। সিঁথি মোড় থেকে শুরু করে ৩০এ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত কে সি ঘোষ রোডের দু’পাশেই রয়েছে সোনার বিপণি। রাস্তার উপরে রয়েছে একাধিক সোনার দোকান। গলির ভিতর সোনার গয়না তৈরির কারখানা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে সোনাপট্টি নামেও পরিচিত এই এলাকা। রাতভর চলে কাজ।
৩০এ বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে রাস্তার ডানপাশ কলকাতা পুলিশের সিঁথি থানার অন্তর্গত। আর বাঁ দিক বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের বরানগর, দমদম ও কিছু অংশ নাগেরবাজার থানা এলাকায় বিভক্ত। একেবারে সীমানা এলাকা হওয়ায় সবকটি থানা থেকেই এই রাস্তার দূরত্ব অনেকটাই। সবচেয়ে নিকটবর্তী থানা সিঁথি। খুন-ডাকাতির মতো দুঃসাহসিক ঘটনার পর নিরাপত্তা বাড়াতে এলাকায় দিনে তিনবার করে টহলদারি শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বারাকপুর পুলিশ ও কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা সিঁথি ও দমদম স্টেশন সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে যৌথ বৈঠক সারেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় ৩০এ বাসস্ট্যান্ড চত্বর বেশ স্পর্শকাতর। এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কিছুটা আলগা। কলকাতার দিক থেকে এই জংশন টপকে দমদমের বেদিয়াপাড়ায় কোনও দুষ্কৃতী ঢুকে গেলে তাকে ট্র্যাক করা বেশ দুষ্কর। শুধু তাই নয়, এই এলাকায় রয়েছে প্রচুর গলি। যেখানে পুলিশের নজর এড়ানো সহজ। সবদিক খতিয়ে দেখে বাসস্ট্যান্ডে একটি কিয়স্ত তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। যা আউটপোস্টের মতো কাজ করবে। এই কিয়স্ক থাকবে সিঁথি থানার অধীনে। কোনও প্রয়োজনে মানুষে সেখানে দ্রুত রিপোর্ট করতে পারবেন। একইসঙ্গে, গাড়ি বা বাইকে দুষ্কৃতীরা পালাতে গেলেও পথ পাবে না। বাসস্ট্যান্ডেই বসানো হচ্ছে এএনপিআর ক্যামেরা। যা সংশ্লিষ্ট গাড়ির গতিপথ নিমেষে বলে দেবে তদন্তকারীদের। লালবাজারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কোনও ছোটো রাস্তায় এই প্রথম বসছে এএনপিআর। এলাকাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থেই এই উদ্যোগ। স্থানীয় বাসিন্দা কনক মজুমদার বলেন, খুন-ডাকাতির পর এলাকায় আতঙ্ক বেড়েছে। পুলিশের এই উদ্যোগ তা কমাবে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাও বাড়বে। নিজস্ব চিত্র