• ঘুমের মধ্যে পুড়ে মৃত একই পরিবারের চার, অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
    বর্তমান | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, উলুবেড়িয়া: শীতের রাতে ঘরের মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থাতেই আগুনে পুড়ে মৃত্যু হল একই পরিবারের চারজনের। মৃতদের মধ্যে রয়েছে নবম শ্রেণির এক ছাত্রী। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার গভীর রাতে আমতার জয়পুর থানার সাউড়িয়া সিং পাড়ার খালনা বাঁধ এলাকায়। খবর পেয়ে দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এলেও ততক্ষণে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে গোটা বাড়ি। কীভাবে আগুন লেগেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে দমকলের প্রাথমিক অনুমান, সম্ভবত শর্ট সার্কিট থেকেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতরা হলেন দুর্যোধন দলুই (৭৫), তাঁর ছেলে দুধকুমার দলুই (৪২), বউমা রত্না দলুই (৩৮) এবং নাতনি শম্পা দলুই (১৪)। জয়পুর থানার পুলিশ মৃতদেহগুলি ময়নাতদন্তের জন্য উলুবেড়িয়ার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। 

    জানা গিয়েছে, বয়স্ক বাবা, স্ত্রী, এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়েই ছিল দুধকুমারের সংসার। তিনি পেশায় ছিলেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। তাঁর আরও এক ছেলে ছিল, তবে বছর দশেক আগে সে মারা গিয়েছে। ছোটো ছেলে কাজের সূত্রে থাকেন ওড়িশায়। রবিবারের আগুনে গোটা পরিবার শেষ হয়ে গেলেও একমাত্র সলতে হিসেবে রয়ে গিয়েছেন তিনি। দলুই পরিবার যে বাড়িতে থাকত, সেটি অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘর। ওইদিন সাউড়িয়া বিশালাক্ষ্মীতলায় গঙ্গাপুজোর অনুষ্ঠান ছিল। ওই অনুষ্ঠানে বাকিদের মতো তাঁরাও গিয়েছিলেন। শীতের রাতে ঘরে ফিরে তাঁরা সকলেই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দুর্যোধনবাবু ছিলেন একটি ঘরে, অন্য ঘরে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন দুধকুমারবাবু। রাত ১২টা নাগাদ হঠাৎ আগুন লাগে ঘরে। নিমেষে সেই আগুন গ্রাস করে গোটা বাড়িকে। দুধকুমারের বাড়িটি একটু ফাঁকা এলাকায়, তার উপর শীতকাল বলে দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় তৎক্ষণাৎ বিষয়টি কারওরই নজরে আসেনি। খানিক বাদে তাঁরা যখন টের পান, ততক্ষণে দাউদাউ করে জ্বলছে ওই বাড়ি। তাঁরাই খবর দেন জয়পুর থানা ও দমকলকে। নিজেরাও আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। দমকলের ইঞ্জিন ও পুলিশ যখন এসে পৌঁছোয়, ততক্ষণে সবই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। পরে পুলিশ ও দমকলকর্মীরা ঘরের ভিতর থেকে চারজনের অর্ধদগ্ধ দেহ বের করে। দমকল সূত্রে খবর, আগুনের জেরে অ্যাসবেসটসের চাল ভেঙে পড়ায় চারজন তার নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিলেন। সেকারণেই হয়তো তাঁরা বেরতে পারেননি। আগুনের উৎস কী, সেব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি দমকলের আধিকারিকরা। তবে শর্ট সার্কিট থেকেই সম্ভবত আগুন লেগেছে বলে মনে করছেন তাঁরা। 

    সোমবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, গোটা গ্রাম শোকস্তব্ধ। দুধকুমারের মাটির বাড়িটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে পোড়া জিনিসপত্র। পুলিশ ঘিরে রেখেছে ওই এলাকা। বিভিন্ন জায়গায় গ্রামবাসীদের জটলা। পুলিশ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। দুধকুমারবাবু বাড়ি করার জন্য ইট কিনেছিলেন। আশা ছিল, দাদার বাড়ির পাশেই পাকা ঘর বানাবেন তিনি। কিন্তু রবিবারের অভিশপ্ত রাত সব কিছুই কেড়ে নিল। এদিন সকালে ওই এলাকায় যান আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল। তিনি বলেন, খুবই দুঃখজনক ঘটনা। কীভাবে আগুন লাগল, পুলিশ ও দমকল তা তদন্ত করে দেখছে।   নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)