নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রকাশ্য রাস্তায় ছেলের সামনে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হলো বাবাকে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিনিট তিনেকের মধ্যে কাজ সেরে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত। সোমবার সকাল পৌঁনে ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার রাজাবাজার মোড়ে। মৃতের নাম মেহেবুব আলম (৪১)। পেশায় ফল বিক্রেতা ছিলেন তিনি। বাবার রক্তাক্ত দেহ ভ্যানে করে এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যান বড় ছেলে। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিরোধের জেরেই মেহেবুবকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান। অভিযুক্তের খোঁজে শুরু হয়েছে তল্লাশি।
নারকেলডাঙার এম এন চ্যাটার্জি রোডের বাসিন্দা মেহেবুব দীর্ঘ দশ বছর ধরে ফলের ব্যবসা করেন। প্রতিদিন সকালে ভ্যানে করে ফল নিয়ে এসে তিনি রাজাবাজার মোড়ে বিক্রিবাটা করেন। মেছুয়া থেকে তিনি বিভিন্ন ধরনের ফল কিনে আনতেন। বড় ছেলে বাবাকে ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করেন। অন্যদিনের মতো সোমবার সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ ভ্যান নিয়ে আসেন মেহেবুব। সঙ্গে ছিলেন বড় ছেলে। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ সোহেলের কথায়, ভ্যানটি ফুটপাতের ধারে দাঁড় করিয়ে দোকান লাগানোর জন্য রাস্তা সাফ করছিলেন মেহেবুব। তখন মুখে গামছা বাঁধা এক যুবক আচমকা তাঁর কাছাকাছি চলে আসে। ওই সময় ফল বিক্রেতার মোবাইলে একটি ফোন আসে। তিনি ফোনে কথা বলার সময় ওই ব্যক্তি ছুরি বের করে তাঁর গলার ডানদিকে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করে। যা দেখে ঘাবড়ে যান ছেলে ও ফুটপাতের অন্য দোকানিরা। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দৌড়ে পালিয়ে যায় ওই যুবক। অন্যরা পিছু ধাওয়া করলেও ভিড়ে মিশে যায় সে। রাস্তায় রক্তাক্ত হয়ে পড়ে থাকা মেহেবুবকে ছেলেই ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
খবর পেয়ে আসে আমহার্স্ট থানার পুলিশ। তদন্তকারীরা দেখেন, রাস্তায় চাপ চাপ রক্ত পড়ে রয়েছে। ঘিরে দেওয়া হয় ঘটনাস্থল। স্থানীয়রা পুলিশকে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত যুবকের মুখ গামছা দিয়ে ঢাকা ছিল। পরনে ছিল কালো রঙের জ্যাকেট। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই যুবকের ছবি হাতে পেয়েছে পুলিশ। তাকে চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে খবর। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই যুবক মেহেবুবের পরিচিত। যে কারণে মুখ ঢেকে এসেছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, যে জায়গায় মেহেবুব ভ্যান লাগাতেন, সেখানে অন্য একজন ভ্যান লাগিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করছিল। মেহেবুবের আপত্তিতেই সে ভ্যান লাগাতে পারছিল না। সম্ভবত সেই রাগ থেকেই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে একটি মহল মনে করছে।
আবার অন্য একটি মহলের দাবি, মেহেবুব ফল বিক্রি করে ভালো টাকা জমিয়েছিলেন। সেই টাকা সুদে ধার দিতেন। এমনকি, প্রোমোটিং ব্যবসাতেও কিছু বিনিয়োগ করেছিলেন। খুনের কারণ হিসেবে তদন্তকারীদের সন্দেহ, এ ঘটনার পিছনে লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় থাকতে পারে। একইসঙ্গে যাঁদের কাছ থেকে তিনি ফল কিনতেন, তাঁরা প্রাপ্য টাকা না পাওয়ার জেরে এই ঘটনা ঘটিয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা উচিত। যে কারণে সংশ্লিষ্ট ফ্রুট মার্চেন্ট, তাঁর পরিচিত লোক, ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে বলে খবর।