• মেসি: গোলমালের তদন্ত পুলিশই করবে, স্পষ্ট করলেন বিচারপতি
    এই সময় | ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: সল্টলেক স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসির অনুষ্ঠানে গোলমাল, অব্যবস্থায় পুলিশের তদন্তে হস্তক্ষেপ করল না কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার রাতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিতে গিয়ে জানিয়েছে, ১৩ ডিসেম্বরের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে পুলিশের তদন্ত করার কথা। এখনও পর্যন্ত পুলিশি তদন্তে ত্রুটি আছে, এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই বলে জানিয়েছে আদালত। ফলে সিবিআইকে তদন্ত হস্তান্তরের আবেদন গ্রাহ্য করেনি হাইকোর্ট। এই বিষয়ে সব পক্ষের থেকে হলফনামা তলব করা হয়েছে। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি।

    সে দিন স্টেডিয়ামে মেসির অনুষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা, দর্শকদের বঞ্চনা ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি পার্থসারথি সেনের বেঞ্চে চলা এই মামলায় রাজ্যের বক্তব্য ছিল, সরকারি কোনও অনুষ্ঠান নয়, সরকার টিকিট বিক্রিও করেনি। ফলে টিকিটের টাকা ফেরাতে সরকার আগ বাড়িয়ে কোনও পদক্ষেপ করবে না। যদি হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, তখন রাজ্য ভাববে। সোমবার আদালত জানিয়েছে, আগ বাড়িয়ে টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে সচেষ্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই রাজ্যের।

    এ দিনই যুবভারতীতে ভাঙচুরের ঘটনায় ধৃত ন’জনের জামিন মঞ্জুর করেছে বিধাননগর মহকুমা আদালত। ধৃতদের আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা এবং কৌশিক দাস বলেন, ‘ধৃতরা কী ভাবে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তা পুলিশ স্পষ্টভাবে জানাতে পারেনি। সোমবার হঠাৎ–ই জেলে গিয়ে জেরার আর্জি জানিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ তো আগেও করা যেত। আসলে এটা জামিন আটকানোর ফিকির।’ সরকারি আইনজীবী সাবির আলি জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘ধৃতদের জেরার প্রয়োজন আছে। ধৃতদের কাছ থেকে কয়েক জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। এই ন’জন জামিন পেলে অন্যদের ধরা সমস্যা হবে।’ সেই যুক্তি মানেনি আদালত। তদন্তকারীদের যুক্তি, মেসিকে দেখতে না পেয়ে উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে কেউই প্রতারণার অভিযোগ করেননি। উল্টে, পুলিশেরই শতদ্রুর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা রুজু করা উচিত ছিল বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

    এ দিন অনুষ্ঠানের আয়োজক শতদ্রু দত্ত–র হয়ে আইনজীবী হাইকোর্টে ইঙ্গিত করেন, মেসিকে দর্শকরা দেখতে না পাওয়ায় যে বিশৃঙ্খলা হয়েছিল, তাতে উদ্যোক্তাদের কোনও ভূমিকা নেই। গোটা ব্যাপারটাই পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করছিল। অভিযোগ ওঠে, শাসকদলের প্রভাবশালীদের সঙ্গে বোঝাপড়ায় বিদেশি খেলোয়াড় আনার নামে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। একদিকে সপার্ষদ ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের মাঠে ঢুকে মেসিকে ঘিরে থাকা, অন্যদিকে মাঠে বেআইনি ভাবে লোক ঢোকানো নিয়েও অভিযোগ ওঠে।

    মামলায় আরও অভিযোগ, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ব্যক্তিগত উদ্যোগে সরকারি জায়গায় ৭০ ফুটের মেসির মূর্তি বসিয়েছেন। যা শুনে বিচারপতি পালের প্রশ্ন, সরকারি জায়গায় হলে তা ব্যক্তিগত হয় কী করে? অভিযোগ ওঠে, প্রথমে ১৫০টি পাস দেওয়া হলেও এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর চাপে পরে তা তিনগুণ করা হয়। মাঠে ঢুকে পড়ে অগণিত মানুষ, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন মেসি ও অন্যান্য খেলোয়াড়রা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যুবভারতীতে যাওয়ার পথে আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা জানতে পারেন। প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে যে কমিটি গড়েন, তাও বেআইনি বলে অভিযোগ করা হয়। এমন কমিটি গড়তে হলে বিধানসভার অনুমতি নিতে হয় বলে দাবি মামলাকারীদের।

    রাজ্যের যুক্তি, পুলিশ আগেই কঠোর নির্দেশিকা দিয়েছিল। আয়োজকরা নির্দিষ্ট তালিকা বা পরিকল্পনা জমা দেয়নি। মেসির নিরাপত্তা ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে। রাজ্য পুলিশকে অনেক ক্ষেত্রে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল।

  • Link to this news (এই সময়)