কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে ফুটবল কিংবদন্তি লিওনেল মেসিকে স্বাগত জানাতে আয়োজিত এক কনসার্টে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন খ্যাতনামা ভারতীয় বংশোদ্ভূত গায়ক চার্লস অ্যান্টনি। লন্ডন থেকে বিশেষভাবে পরিবেশনা করতে আসা এই শিল্পী জানান, পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল যে তাঁকে কার্যত প্রাণ বাঁচিয়ে পালাতে হয়।
১৮টি ভাষায় গান গাওয়া চার্লস অ্যান্টনি মেসির জন্য একটি বিশেষ স্প্যানিশ গান রচনা করেছিলেন। কিন্তু চরম বিশৃঙ্খলার কারণে সেই গান আর গাওয়া হয়ে ওঠেনি। তাঁর কথায়, স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল।
পিটিআই-কে অ্যান্টনি বলেন, 'আমি মেসিকে হাসতে দেখেছি, কিন্তু তাঁর মুখে উদ্বেগ স্পষ্ট ছিল।' মেসি ও লুইস সুয়ারেজ মাঠ প্রদক্ষিণ করার সময় গ্যালারি থেকে জলের বোতল, খাবারের প্যাকেট, এমনকি পাথর ও ধাতব জিনিস ছোড়া হতে থাকে। ভিআইপিরা চলে যাওয়ার পরই জনতা মাঠে নেমে পড়ে এবং পরিস্থিতি দ্রুত হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।
গায়ক জানান, তখন পুলিশ তাঁকে সাফ বলে দেয়, 'প্রাণ বাঁচাতে হলে দ্রুত সরে যান।' অ্যান্টনির কথায়, 'সবাই ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আমার দিকে কেউ তাকাচ্ছিল না। কোনওভাবে গিটার, কেবল আর মাউথ অর্গান একটি ব্যাগে ভরে দৌড়াতে শুরু করি। গলায় অ্যাক্সেস ট্যাগ থাকায় অনেকে আমাকে সংগঠক ভেবে ভুল করেছিল, ফলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।'
ভাগ্যক্রমে তিনি আহত হননি এবং তাঁর কোনও যন্ত্রপাতিরও ক্ষতি হয়নি। মালয়ালি বংশোদ্ভূত এই গায়ককে নিরাপত্তার স্বার্থে স্টেডিয়াম থেকে সরাসরি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
অ্যান্টনি জানান, ভূগর্ভস্থ পথ দিয়ে ভিভিআইপিদের সরিয়ে নেওয়ার পর এবং প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় স্টেডিয়াম ছেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জনতা মাঠে ঢুকতে শুরু করে। তখনই পুলিশ সবাইকে দ্রুত সরে যেতে বলে।
তিনি আরও বলেন, 'মেসিকে কাছ থেকে দেখতে না পেয়ে বহু দর্শক কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।' উল্লেখযোগ্যভাবে, অ্যান্টনি জানান যে তিনি এই অনুষ্ঠানের জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেননি। আয়োজকরা কেবল লন্ডন থেকে তাঁর যাতায়াত এবং ভারতে থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করেছিলেন।
চার্লস অ্যান্টনি এই আয়োজনের তুলনা করেন ২০১৬ সালে মারাদোনার ভারত সফরের সঙ্গে। যা তাঁর মতে ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও দর্শনীয়। তিনি সম্পূর্ণভাবে আয়োজক শতদ্রু দত্তকে দোষ দিতে চাননি, তবে বলেন, 'পরিস্থিতির অবনতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল, যা কারও নিয়ন্ত্রণে ছিল না।'