• শীতের কুয়াশায় আবার ‘লেট লতিফ’ ট্রেন, ফগ ডিভাইস কেনার ৯১ কোটি টাকা জলে!
    বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ২১ ডিসেম্বর। ডিব্রুগড় রাজধানী এক্সপ্রেস দিল্লি পৌঁছেছে সাড়ে ১০ ঘণ্টা লেটে। ২০ ডিসেম্বর শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেস কলকাতায় পৌঁছয় ন’ঘণ্টারও বেশি দেরিতে। ওইদিন হাওড়া দুরন্ত এক্সপ্রেস নিউদিল্লি স্টেশনে আসে নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পর। ২২ ডিসেম্বর শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেস দিল্লিতে পৌঁছয় সাড়ে সাত ঘণ্টা দেরিতে। এই তালিকা ক্রমবর্ধমান। কারণ শীতের মরশুমে বিশেষত দিল্লি সহ তামাম উত্তর ভারতে ইতিমধ্যেই প্রবল কুয়াশার দাপট শুরু হয়ে গিয়েছে। আর তারই জেরে একের পর এক দূরপাল্লার মেল, এক্সপ্রেস ট্রেন মাত্রাছাড়া দেরিতে চলছে। এর ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ রেল যাত্রীদের। প্রতি বছরের মতো এবারও কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ হয়েই বসে রয়েছে রেল। 

    যাত্রীদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, রেল হাজার হাজার ‘ফগ ডিভাইস’ কার্যকরের দাবি করলেও বাস্তবে সেগুলি কাজই করছে না। তারই ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। রেল বিশেষজ্ঞ মহলের আশঙ্কা, মাত্রাছাড়া ট্রেন লেটের ঘটনাতেই প্রমাণিত, ‘ফগ ডিভাইস’ কেনার কোটি কোটি টাকা একপ্রকার জলেই গিয়েছে। রেলের তথ্য অনুসারে, মোদি সরকারের বিগত ১১ বছরে প্রায় ৩০০ গুণ বেশি ‘ফগ ডিভাইস’ কেনা হয়েছে। ২০১৪ সালে সারা দেশে রেলের কাছে ‘ফগ ডিভাইস’ ছিল মাত্র ৯০টি। ২০২৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৫ হাজার ৯৩৯টি। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে রেলের হাতে ‘ফগ ডিভাইস’ রয়েছে প্রায় ২৬ হাজার। রেল বোর্ড সূত্রের খবর, এহেন একেকটি কুয়াশা প্রতিরোধকারী যন্ত্র কমবেশি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় কেনা হয়। এর অর্থ, প্রায় ২৬ হাজার ‘ফগ ডিভাইস’ কিনতে রেল এখনও পর্যন্ত খরচ করেছে অন্তত ৮০ থেকে ৯১ কোটি টাকা। 

    বলা বাহুল্য, এই ২৬ হাজার কুয়াশা প্রতিরোধকারী যন্ত্র রেল একবারে কেনেনি। বিভিন্ন পর্যায়ে জোনভিত্তিতেই তা কেনা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এই যে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে, তা কোন কাজে লেগেছে? তেমনই এক্ষেত্রে কোনওরকম আর্থিক গরমিল হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও বড় হয়ে উঠছে। রেল বোর্ড সূত্রে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, ‘ফগ ডিভাইসে’র মাধ্যমে ঘন কুয়াশা কমানো সম্ভব নয় কিংবা রেলপথের দৃশ্যমানতা আচমকা বাড়িয়ে দেওয়াও অসম্ভব। কুয়াশার প্রাবল্যে অনেক সময়ই সিগন্যাল এড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। লেভেল ক্রসিংগুলোতেও বিপদ ঘটতে পারে। ‘ফগ ডিভাইস’ সংশ্লিষ্ট ট্রেনের লোকো পাইলটকে তার আঁচ দিতে পারে মাত্র। ফলে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়। কিন্তু দৃশ্যমানতা কম থাকলে গতি নিয়ন্ত্রণে রেখেই ট্রেন চালাতে হয় লোকো পাইলটদের। এর সার্বিক প্রভাব দূরপাল্লার ট্রেন চলাচলের উপর পড়ে।
  • Link to this news (বর্তমান)