গ্যাং ওয়ার থামাতে দ্রুত বিশেষ পদক্ষেপ, মাদক কারবার নির্মূল করতে মোজামপুরে ঢুঁ পুলিস সুপার
বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: জাল গোটানো শুরু। মাদক কারবার নির্মূল করতে এবার মোজামপুর চষে বেরালেন মালদহের এসপি অভিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘুরে দেখলেন গ্রামের প্রত্যন্ত এই এলাকা। কথা বললেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। পরিদর্শন শেষে জানালেন, মাদক কারবার নির্মূল করতে তৈরি করা হচ্ছে ব্লু প্রিন্ট।
পুলিশ সুপার বলেন, মোজামপুরের যে সমস্ত এলাকায় ব্রাউন সুগার কারবারের রমরমা, সেই সমস্ত এলাকা ঘুরে দেখলাম। বেশকিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি।
দীর্ঘদিন কারবার চললেও সম্প্রতি নারায়ণপুর, মোজামপুর, ইমামজাজির, ফিরোজপুরের মতো এলাকা রীতিমতো ব্রাউন সুগার তৈরির হাব হয়ে উঠেছে। এই এলাকা থেকে পুলিশের জালে পড়েছে বেশকিছু কুখ্যাত কারবারিও। উত্তর-পূর্ব ভারত, বিশেষ করে মণিপুর থেকে চোরাপথে ব্রাউন সুগার তৈরির কাঁচামাল ঢুকছে কালিয়াচকে। তারপর এই সমস্ত এলাকায় বাড়িতে কারখানা তৈরি করে বানানো হচ্ছে ব্রাউন সুগার। যা মালদহ থেকে রেল, সড়ক আবার কখনও জলপথে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
দায়িত্ব নেওয়ার পরই জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলার বার্তা দিয়েছিলেন পুলিশ সুপার। তারপর থেকে ব্রাউন সুগার সহ মাদক কারবার রুখতে লাগাতার ধরপাকড় চালাচ্ছে জেলা পুলিশ। এমনকি পুলিশের খাতায় পলাতক কারবারিদের সম্পত্তি ক্রোক করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে পুলিশ। শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ব্রাউন সুগার উদ্ধার হয়েছে। মাদক পাচার করার অপরাধে ১৫ জনের বেশি পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিন এসপি জানান, মাদক সেবন এবং মাদক কারবার রুখতে এবার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা হচ্ছে। মাদক সেবনের ফলে একদিকে যুব সমাজের ক্ষতি হচ্ছে, তার সঙ্গে মাদক কারবারীদের দৌরাত্ম্যও বাড়ছে।
মাদক কারবারের মতোই কালিয়াচকের আরেকটি অন্ধকার দিক হল গ্যাং ওয়ার। যে কারণে বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে মোজামপুর। বাম আমল থেকে এই এলাকার দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ চলছে। এখানে একটি গোষ্ঠী চালায় স্থানীয় মাফিয়া এনারুল ও আরেক গোষ্ঠী পরিচালনা করে আসাদুল বিশ্বাস। মূলত এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে এই দুই গ্যাংয়ের মদ্যে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষ হয়। ব্রাউন সুগার সহ মাদক কারবার, বেআইনি অস্ত্র কেনাবেচা এবং বিভিন্ন ধরনের কালো কারবার ও তার টাকা ভাগাভাগি নিয়েই এনারুল ও আসাদুল গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের লড়াই। সম্প্রতি তাদের দুই গোষ্ঠীর লোকজন একে অপরকে লক্ষ্য করে রীতিমতো গুলির লড়াই লড়ে। এই দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যেই খুন হচ্ছে এলাকায়।
পুলিশ এখানে হানা দিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রচুর পরিমাণে ব্রাউন সুগার, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। এদিন মোজামপুরে গিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখার পাশাপাশি বহু মানুষের সঙ্গে বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলেন এসপি। সরাসরি সাধারণ মানুষের মুখ থেকে তাঁদের এলাকার অপরাধ সংক্রান্ত সমস্যার কথা শোনেন তিনি। মোজামপুরের গ্যাংওয়ার নিয়ে এদিন পুলিশ সুপারের মন্তব্য, এখানে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলছে। সেই সমস্ত স্পর্শকাতর জায়গাগুলিও ঘুরে দেখেছি। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মোজামপুরে পুলিস সুপার।-নিজস্ব চিত্র