• জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের পর হরিশ পাল, মূর্তি বসানোর প্রতিযোগিতা চলছে কোচবিহারে
    বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: কোচবিহারে মহারাজাদের মূর্তি সহ বহু বিশিষ্টজনের মূর্তি বসানোর দাবি অনেক দিন ধরেই রয়েছে। কিন্তু রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই রাজনগরে মূর্তি বসানোর যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। চলতি মাসেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের সামনে কোচবিহারের মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুরের মূর্তি বসায় পুরসভা। যার নেপথ্যে ছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। এবার শহরের প্রাণকেন্দ্র হরিশ পাল চৌপথিতে বসানো হল প্রখ্যাত লোকসংগীত গবেষক প্রয়াত হরিশ পালের আবক্ষ মূর্তি। যদিও এই মূর্তি পুরসভা বসায়নি। কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক অর্থাৎ হিপ্পির পৃষ্ঠপোষকতায় হরিশ পালের মূর্তিটি বসানো হল। ফলে ফের একবার রবি-হিপ্পি দ্বৈরথ সামনে এল। 

    মহারাজা ভূপবাহাদুরের মূর্তি বসানো নিয়ে জেলা তৃণমূলের প্রবীণ নেতা রবি ঘোষ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল। তার আগে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের প্রধান অফিস পরিবহণ ভবনের সামনেও মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুরের মূর্তি বসানো হয়েছে। এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায়ের উদ্যোগে সেই মূর্তি বসানো হয় সেখানে। এদিন কোচবিহারের হরিশ পাল চৌপথিতে বিশিষ্ট লোকসংগীত গবেষক হরিশ পালের আবক্ষ মূর্তি বসানো হল। এখানে অবশ্য রবি ঘোষকে দেখা যায়নি। 

    এদিকে, কোচবিহার পুরসভার পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে দেবীবাড়িতে মহারাজা বিশ্বসিংহের মূর্তি বসানো হবে। কোচবিহারের মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও মহারাজার মূর্তি বসানো হবে বলে জানা গিয়েছে। চারিদিকে এত মূর্তি! তাই অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই শাসক দলের বিভিন্ন ‘গোষ্ঠী’ মূর্তি বসানোর ক্ষেত্রে তৎপরতা শুরু করেছে। 

    জেলা তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, কোচবিহারে হরিশ পালের মূর্তি বহু আগেই বসানো উচিত ছিল। সেটা কোনও কারণে হয়ে ওঠেনি। কৃষ্ণকান্ত বর্মনের উদ্যোগে এটা হয়েছে। আমরা শুধু তাঁকে সহায়তা করেছি। হরিশ পালের মূর্তি কোচবিহারে বসলে হরিশ পাল মোড়েই বসানো হোক, এটা আমরা চেয়েছিলাম। তাই তাঁর বাড়ির সামনেই মূর্তিটি বসানো হল। উত্তরবঙ্গ তথা গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে ভাওয়াইয়া সংগীতের ঐতিহ্যকে তিনি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছেন। কোচবিহারের ইতিহাসকে তুলে ধরার জন্যই মূর্তিটি বসানো হল। 

    কোচবিহারের বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক তথা হরিশ পালের পৌত্র ঋষিকল্প পাল বলেন, প্রাজ্ঞ পল্লী সংস্কৃতিবিদ হরিশচন্দ্র পাল মূর্তি স্থাপন কমিটি একটি শ্বেতপাথরের মূর্তি বানিয়ে এনেছে। সেটাই এদিন এখানে স্থাপন করা হয়েছে। পরিবারের সদস্য হিসেবে আমিও সেই অনুষ্ঠানে ছিলাম। এই কাজে অভিজিৎ দে ভৌমিক সহায়তা করেছেন। এই  উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এর আগেও অনেকবার হরিশ পালের মূর্তি বসানোর কথা হয়েছিল। কোনওবারই সেটি সফল হয়নি। এবার তা হল। 

    এদিনের কর্মসূচিতে ছিলেন না কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, হরিশ পালের মূর্তি বসানোর কোনও খবর জানা নেই। তবে পুরবাসীর একাংশ বলেন, সামনেই বিধানসভা ভোট। তার আগে নিজদের জাহির করতে মহারাজা, বিশিষ্ট ব্যক্তি, মণীষীদের মূর্তি বসানোর ধূম পড়েছে এই শহরে।  কোচবিহারে হরিশ পাল চৌপথীতে বসানো হল খ্যাত লোকসংগীত গবেষক প্রয়াত হরিশ পালের আবক্ষ মূর্তি। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)