ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: জঙ্গি নিকেশ ও সন্ত্রাস দমনে এবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্যতম ‘হাতিয়ার’ হতে চলেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। শত্রুকে চিহ্নিত করে তাকে খতম করতে সক্ষম হবে এআই নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক ড্রোন। সেইসঙ্গে দুর্গম এলাকায় বিস্ফোরক খুঁজে বের করতে তৈরি করা হচ্ছে এআই পরিচালিত শক্তিশালী রোবট। একইসঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে মিসাইলের রেঞ্জ। স্পেস ও সাইবার ক্ষেত্রকে আরও জোরদার করার কাজও চলছে সমানতালে। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে এমনটাই জানালেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ডিআরডিও) আইটি অ্যান্ড সাইবার সিকিউরিটি বিভাগের ডিরেক্টর শৈবালকুমার পাল।
‘বর্তমান’-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, দেশের সামরিক ক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করতে নানা ক্লাস্টারে কাজ করছে ডিআরডিও। ল্যান্ড, এয়ার কিংবা সি অর্থাৎ ভূমি, আকাশ ও জলপথে ব্যবহার করা ক্ষেপণাস্ত্র তো রয়েইছে। সেইসঙ্গে স্পেস ও সাইবার ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। নতুন টেকনোলজি দিয়ে আমরা প্যারামিটারগুলির উন্নতির কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। একইসঙ্গে সামরিক সেক্টরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অটোমেশনের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোয়ান্টাম টেকনোলজি ব্যবহার করছি আমরা। এআই পরিচালিত অত্যাধুনিক ড্রোন ও রোবট তৈরি করা হচ্ছে। দুর্গম এলাকায় বিস্ফোরক খোঁজা থেকে জঙ্গি চিহ্নিত করে তাদের খতম করতে সক্ষম হবে সেগুলি। সাবমেরিনের পাশাপাশি ডিআরডিও মিসাইলের রেঞ্জ বাড়ানোর কাজে বর্তমানে জোর দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার ডিরেক্টর এস কে পাল। তিনি বলেন, আমরা আগেই অগ্নি-৫ তৈরি করেছি। তার সফল উৎক্ষেপন হয়েছে। এবার এর টেকনোলজিকে আরও উন্নত করার কাজ চলছে। সেক্ষেত্রে এর আপডেট ভার্সনের রেঞ্জ হতে পারে ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার কিমি। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে এই আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল সাড়ে ৮ হাজার কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে অব্যর্থ আঘাত করতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, আমাদের হাতে এখন যেসব মিসাইল রয়েছে, সেগুলির প্রত্যেকটিই আধুনিক করা হচ্ছে। রেঞ্জ বাড়ানোর কাজ চলছে। দেশের সামরিক ক্ষেত্রে এআই-এর প্রয়োগ নিয়ে ডিআরডিও’র ডিরেক্টর বলেন, ডিফেন্সের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে অটোমেশনের দরকার। অনেক অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, যেখানে মানুষ গেলে রিস্ক ফ্যাক্টর হয়ে যায়। সেসব জায়গায় এআই টেকনোলজি ব্যবহার করে কীভাবে কার্যকারিতা আরও বাড়ানো যায়, সেই কাজটাই করছে ডিআরডিও। তিনি জানিয়েছেন, মনিটরে ধরা পড়া ছবি দেখে এআই তাকে জঙ্গি বা সন্দেহভাজন বলে চিহ্নিত করবে। প্রয়োজনে এআই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে গুলি চালিয়ে কিংবা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওই সন্দেহভাজনকে খতম করে দেওয়া সম্ভব হবে। সামরিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রয়োগ ঘটিয়ে দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রধান সুভাষ বর্মন বলেন, সুস্থিত উন্নয়নে কীভাবে এআই’কে কাজে লাগানো যেতে পারে, তার উপর দু’দিনের জাতীয় সেমিনার হচ্ছে আমাদের কলেজে। মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার বিষয়টিও রয়েছে।