আদুরিয়ার জঙ্গলে বাড়ছে ময়ূরের সংখ্যা পর্যটনকেন্দ্র গড়ার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের
বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: শীতের সকালে আউশগ্রামের আদুরিয়ায় ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছে ময়ূর-ময়ূরীর দল। এভাবে ময়ূর ঘুরে বেড়ানো দেখতে আউশগ্রামে শীত পড়তেই ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের। অনেকে লেন্সবন্দি করতেও ছাড়ছেন না। জঙ্গল ঘেরা পরিবেশে পর্যটকরা এসেও শুধু ময়ূর দেখেই ফিরে যাচ্ছেন। আদুরিয়ার জঙ্গল ঘিরে পর্যটকদের জন্য ইকো-ট্যুরিজম গড়ার দাবি স্থানীয়দের। পরিবেশবান্ধব পর্যটন কেন্দ্র গড়া হলে এলাকার অর্থনৈতিক চেহারাটাই বদলে যাবে বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। এনিয়ে আউশগ্রাম-২এর বিডিও চিন্ময় দাস বলেন, এখানে বন দপ্তরেরও ভূমিকা রয়েছে। ওরা সন্মত হলে আমরা প্রস্তাব পাঠাতে পারি। তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে কাঁকসার জঙ্গলে দেউলে পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকটি ময়ূর ছেড়েছিল বন দপ্তর। ধীরে ধীরে উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে সেই ময়ূর বংশবিস্তার করেই আশপাশের জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়েছে। আদুরিয়ার জঙ্গলে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায় ১৫০ থেকে দু’শোটির কাছাকাছি ময়ূর এখন দেখতে পাচ্ছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। যেটা গত বছরে শুধু ৪০টির কাছাকাছি ময়ূর দেখা গিয়েছিল। প্রেমগঞ্জ, কুনুর নদীর ধারে রাঙাখুলা, আদুরিয়া, হেদোগড়িয়া এলাকাগুলিতে সকাল ও বিকেল দু’বেলাই ময়ূরের দর্শন মিলছে। পর্যটকরা ময়ূর দেখতে আসছেন বটে, কিন্তু আদুরিয়ায় থাকার কোনও জায়গা নেই। বিট অফিসে একটি বনবাংলো রয়েছে। সেটা পর্যটকদের জন্য ভাড়া দেওয়া হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাঙাখুলায় জলাশয় রয়েছে। সেখানে বোটিং-এর ব্যবস্থা রাখলে জঙ্গলে পর্যটক আরও বাড়ত। ওই জঙ্গলেও শালকো কালী মায়ের থান রয়েছে। ওই এলাকায় প্রচুর মানুষ আসেন মাকে দর্শন করতে। তাই সেখানে ইকো ট্যুরিজম গড়লে পর্যটকদের ভালো লাগার জায়গা হয়ে উঠবে এই আদুরিয়া।
আদুরিয়া থেকে ১৪ নম্বর রাজ্য সড়ক ধরে মাত্র ২৬ কিলোমিটার গেলেই বোলপুর যাওয়া যাবে। আর ৭ কিমি দূরে ইছাই ঘোষের দেউল। ১৫ কিমির মধ্যে ভাল্কি মাচান রিসর্টও রয়েছে। এখানে প্রতিবছর শীতের মরশুমে প্রচুর পর্যটক আসেন। কিন্তু তাঁরা শুধু শালগাছের জঙ্গল দেখেই চলে যান।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হেদোগড়িয়ায় রাস্তার কাজ বন্ধ রয়েছে কোনও এক অজানা কারণে৷ বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ওই রাস্তা ধরে হেদোগড়িয়া গ্রামে যেতে খুব অসুবিধায় পড়তে হয় বাসিন্দাদের। ওই রাস্তাতেই ময়ূরের মূল বাসস্থান। বিশালাকার ওই জঙ্গল ঘিরে ট্যুরিস্ট প্রকল্প গড়লে এলাকার বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান হবে৷ আউশগ্রামের আদুরিয়া জঙ্গলে ইন্ডিয়ান উলফ, হেঁরোল, খরগোশ, অজগর, বনমুরগি, বনবিড়াল প্রভৃতি জীব জন্তুরও বেশি সংখ্যায় দেখা মিলছে। হেঁড়লের সংখ্যাও আগের চেয়ে বেড়েছে। পাশাপাশি এখন আউশগ্রামের বিভিন্ন জঙ্গল এলাকায় প্যাঙ্গোলিন, সজারু প্রভৃতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এখানে থাকা, খাওয়ার ভালো রিসর্ট না থাকায় মানুষজনকে ইলামবাজার বা বাইরে গিয়ে খাওয়া দাওয়া সারতে হয়। -নিজস্ব চিত্র