• ভৈরবের পাড় থেকে দেদার মাটি চুরি, ক্ষোভ বাসিন্দাদের
    বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, ডোমকল: মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে ভৈরব নদ। এক পাড়ে যান চলাচলের রাস্তা, আর ঠিক উল্টোদিকে নদের পাড়ে চলছে দেদার মাটি লুট। রাতের অন্ধকারে নয়, একেবারে দিনের আলোয় জেসিবি নামিয়ে কাটা হচ্ছে নদের পাড়ের পলিমাটি। সেই মাটি পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। ডোমকল ও হরিহরপাড়া থানার সীমানা ঘেঁষে ডোমকলের শিবনগরে ভৈরব নদের পাড়ে এভাবেই দিনের পর দিন বেআইনি ভাবে মাটি কাটা চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

    ইসলামপুর, ডোমকল ও হরিহরপাড়ার একাধিক অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদ। ডোমকলের ভগীরথপুর শিবনগর এলাকায় একটু ঢুঁ মারলেই স্পষ্ট বোঝা যায় নদের পাড়ের কী দশা। কোথাও কোথাও নদের পাড় বলে কিছু নেই আর। মাটি মাফিয়াদের গ্রাস থেকে বাদ যাচ্ছে না আশপাশের কৃষিজমিও। নদের পাড়ের কৃষিজমি ‘ভাড়া’ নিয়ে চলছে দেদার মাটি লুট। 

    স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গতি পরিবর্তনের ফলে ভৈরব ডোমকলের শিবনগরের দিকে বেশ খানিকটা এগিয়ে এসেছে। ফলে শিবনগরের দিকের ওই অংশে নদের পরে কিছুটা জমি আদতে ডোমকল থানার মধ্যেই পড়ে। দুই থানার সীমানায় হওয়ায় অনেকসময় প্রশাসনিক বিভ্রান্তিও তৈরি হয়। এই প্রশাসনিক বিভ্রান্তিকে হাতিয়ার করেই মাটি মাফিয়ারা নির্বিঘ্নে তাদের কারবার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।

    চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই এলাকায় হানা দিয়েছিল প্রশাসন। ডোমকলের মহকুমা শাসক, ভূমিদপ্তরের আধিকারিক ও প্রশাসনিক টিম জেসিবি আটক করে মাটি কাটার কাজ বন্ধও করেছিল। কিন্তু অভিযোগ, তার প্রভাব ছিল ক্ষণস্থায়ী। বর্ষা কেটে শীত পড়তেই ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাটি মাফিয়ারা। এবার আর লুকোচুরি নয়, একেবারে দিনের আলোতেই চলছে নদের পাড়ের মাটি লুট। কোথাও ঢালু হয়ে গিয়েছে নদের পাড়, কোথাও আবার তৈরি হয়েছে গভীর গর্ত। যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় ধস নামার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। অথচ নিয়ম স্পষ্ট— নদের বুক থেকে কোনওভাবেই মাটি কাটা যাবে না। এমনকী যেসব জমি বছরের একটা বড় সময় জলের তলায় থাকে, সেগুলি রায়তি জমি হলেও সেই জমিগুলিতে মাটি কাটার ক্ষেত্রেও রয়েছে বিধিনিষেধ। কিন্তু সমস্ত সরকারি নিয়মনীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে মাটি লুট। অভিযোগ, এই কাজে একটি সুসংগঠিত চক্র সক্রিয়। নিয়মিত জেসিবি নামানো হচ্ছে নদের পাড়ে। 

    স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, প্রতিবাদ করলেই জুটছে হুমকি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসীর কথায়, কিছু বললেই শুনতে হয়— ‘তোর জমি কাটছি নাকি? যে তোর কথা শুনতে হবে!’ কিন্তু তারা বোঝে না, এভাবে পাড় কাটা চললে নদে জল বাড়লেই বড় ধস নামবে।

    স্থানীয় ভগীরথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আফতাবউদ্দিন বলেন, হ্যাঁ ওই এলাকায় নদের ওপারে ডোমকলের কিছু জমি আছে। গতবছরও প্রশাসন হানা দিয়ে বেশ কয়েকটি ট্রাক্টর আটক করেছিল। আবার মাটি কাটা হচ্ছে কি না খোঁজ নিচ্ছি। ডোমকলের বিএলএলআরও অনুপ বিশ্বাস বলেন, এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
  • Link to this news (বর্তমান)