নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: মোটা কমিশনের বিনিময়ে দুঃস্থ ও অভাবীদের খুঁজে তাঁদের কিডনি বিক্রি করতে রাজি করানোর অভিযোগ। আর একবার কাউকে রাজি করাতে পারলেই পকেটে আসত দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা। সোমবার রাতে এমনই এক কিডনি বিক্রি চক্রের মিডলম্যানকে গ্রেফতার করল নন্দকুমার থানার পুলিশ। ধৃতের নাম মিলন পাত্র। তার বাড়ি খেজুরি থানার বাঁশগোড়া সংলগ্ন বালিচক গ্রামে। বর্তমানে সোনারপুরে থাকত। কলকাতার একাধিক নামী বেসরকারি হাসপাতালে তার অবাধ যাতায়াত। সেখানে কিডনি গ্রহীতার লিস্ট ধরে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন গ্রামে দুঃস্থ ও অভাবীদের মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে কিডনি বিক্রির অফার দিত। মূলত অভাবী সংসারের বধূদের টার্গেট করত। তাঁরা রাজি না হলে স্বামীকে বিপুল অর্থের লোভ দেখিয়ে বধূদের উপর চাপ বাড়ানো হতো। নন্দকুমার থানায় একটি কেসের তদন্তে নেমে পুলিশ মিলনের হদিশ পায়। সোমবার রাতে তাকে পাকড়াও করা হয়। মঙ্গলবার ধৃতকে পূর্ব মেদিনীপুর সিজেএম কোর্টে তোলা হলে বিচারক তিন দিনের পুলিশ হেপাজত মঞ্জুর করেছেন। গত ২ নভেম্বর নন্দকুমার থানার কুমোরআড়া গ্রাম থেকে কার্তিক চক্রবর্তী নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। কার্তিক তমলুক শহরে শঙ্করআড়া বাজার এলাকায় একটি প্যাথলজি ল্যাব চালাত। নিজের স্ত্রী দেবযানী সামন্তকে কিডনি বিক্রির জন্য লাগাতার চাপ দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এই মুহূর্তে কার্তিক জেলবন্দি। সেই মামলায় পুলিশ খেজুরির মিলন পাত্রের খোঁজ পায়। তারপর সোমবার রাতে মিলনকে পাকড়াও করা হয়। মিলন কমিশনের বিনিময়ে কিডনি দাতা খুঁজত এবং প্রতিটি প্রতিস্থাপন কেসে দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা কমিশন পেত বলে পুলিশি জেরায় জানিয়েছে।
২০২২ সালে ১৫ মার্চ কার্তিক ভালোবাসা করে বিয়ে করেছিল মহিষাদল থানার বেতকুণ্ডুর দেবযানীকে। দেবযানী অঙ্কে বিএসসি পাশ। ২০২০ সাল নাগাদ তিনি তমলুক শহরে একটি নার্সিংহোমে মায়ের অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন। মায়ের শারীরিক বেশকিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে গিয়ে প্যাথলজিতে কার্তিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তারপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই বাড়ির মধ্যে দেখাশোনা করে বিয়ে হয়। কিন্তু, বিয়ের পর দেবযানী শ্বশুরবাড়িতে পা রাখা মাত্র যৌতুক দেওয়ার জন্য চাপ আসে। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় বাবাকে হারান দেবযানী। তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বাড়িতে ২৬ জন ছাত্রছাত্রীকে টিউশনি পড়াতেন। সেই টাকায় সংসার চলত। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় তাঁর কিডনি বিক্রি করে টাকা আদায়ের প্ল্যান করেছিল গুণধর স্বামী।
কার্তিক নিজের প্যাথলজি ব্যবসাকে বড় করার জন্য দেবযানীর নামে স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে দফায় দফায় তিন লক্ষ টাকা লোন নিয়ে তাঁকে বেকায়দায় ফেলে দেন। সেই লোন শোধ করতে না পারায় গ্রুপের অন্য সদস্যরা তাঁর মাকে বেদম মারধর করে জখম করে দেন বলে অভিযোগ। শ্বশুরবাড়ির দাবিমতো দেবযানী টাকা দিতে না পারায় তাঁর স্বামী কিডনি বিক্রির জন্য মিডলম্যান হিসেবে মিলনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কার্তিক তার স্ত্রীকে বেশ কয়েকবার কলকাতার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে কিডনি দেওয়ার উপযুক্ত কিনা তা নিয়ে শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষাও করিয়েছে। লাগাতার শারীরিক ও মানিসক নির্যাতনের শিকার দেবযানী কিডনি দিতে বেঁকে বসেন। পাশাপাশি এই অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে নন্দকুমার থানায় এফআইআর করেন। তার ভিত্তিতে তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়। সেই সূত্রে এবার কিডনি বিক্রির মিলনম্যানকেও পাকড়াও করা হল। ধৃত মিলন পাত্র। নিজস্ব চিত্র