দু’বছর আগে বিয়ে, ময়নায় সেনাকর্মীর স্ত্রীর দেহ উদ্ধার, আটক শ্বশুর-শাশুড়ি
বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: মঙ্গলবার সকালে ময়না থানার কালিকাদাঁড়ি গ্রামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল। মৃতার নাম সুনন্দিতা বিজলি(২১)। তাঁর স্বামী গৌতম বিজলি পেশায় সেনা জওয়ান। জম্মুতে কর্মরত। এদিন সকালে নিজের ঘর থেকে না বেরনোয় শ্বশুর সন্তোষ বিজলি তাঁকে ডাকাডাকি করেন। দরজা ভিতর থেকে লাগানো ছিল।
ডাকাডাকির পরও কোনও সাড়া না পেয়ে ছেলেকে ফোন করে জানান সন্তোষবাবু। জম্মু থেকে স্ত্রীকে বারবার ফোন করা সত্ত্বেও সুনন্দিতা ধরেননি। সকাল ৭টা নাগাদ শ্বশুর ছিটকিনি উপড়ে দরজা খুলে সিলিং ফ্যানে ওড়নার ফাঁসে সুনন্দিতাকে ঝুলতে দেখেন। তড়িঘড়ি ফাঁস কেটে নামানো হয়। জানাজানি হতেই এলাকার লোকজন জড়ো হন। বধূর বাপেরবাড়ির লোকজন এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শ্বশুর-শাশুড়ির অত্যাচারে ওই যুবতী এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সুনন্দিতার বাপেরবাড়ির লোকজনের অভিযোগ।
এদিন দেহ উদ্ধার করতে গেলে বাধার মুখে পড়ে ময়না থানার পুলিশ। মৃতার বাপেরবাড়ির লোকজন এনিয়ে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় থানা থেকে বাড়তি ফোর্স যায়। তারপর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য তমলুক মেডিকেল কলেজ হাপসাতালের মর্গে পাঠানো হয়। সেইসঙ্গে মৃতার শ্বশুর ও শাশুড়িকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতার স্বামী জম্মু থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ওই বধূর বাপেরবাড়ি ময়না থানার বাকচা পঞ্চায়েতের মির্জানগর গ্রামে। সেনা জওয়ান গৌতমদের বাড়িও মির্জানগর গ্রামে একই পাড়ায় ছিল। তিনি প্রতিবেশী যুবতীকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে গৌতমের পরিবার নৈছনপুর-১ পঞ্চায়েতের কালিকাদাঁড়ি গ্রামে নতুন বাড়ি বানিয়ে সেখানে বসবাস করছে। কালিকাদাঁড়ি ও মির্জানগর পাশাপাশি দু’টি গ্রাম। এদিন সকালে সুনন্দিতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনা জানাজানি হতেই আশপাশের এলাকা থেকে প্রচুর লোকজন জড়ো হন। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। এখনও সন্তান হয়নি। স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। আচমকা এই মৃত্যুতে প্রত্যেকেই হতবাক।
নাতনির মৃত্যুর খবর জেনে সুনন্দিতার ঠাকুরদা রঞ্জিত বিজলি অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। রঞ্জিতবাবুর দাদা অনিল বিজলি বলেন, আমাদের নাতনি আত্মহত্যা করতে পারে না। ওর কানের কাছে রক্তের দাগ আছে। সম্ভবত ওর কানের কাছে আঘাত করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। মৃতার বাবা সুদীপ্ত বিজলি বলেন, কীভাবে এই ঘটনা ঘটল কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা চাই, পুলিশ প্রকৃত ঘটনা সামনে আনুক।
মির্জানগর গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য সুশান্ত বিজলি এদিন ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, সকাল ৭টা নাগাদ চায়ের দোকানে গিয়ে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের খবর পাই। মাত্র ২১বছরের ওই যুবতীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে সকলেই অবাক। আমরা চাই, কী কারণে এই ঘটনা ঘটল তা প্রকাশ্যে আসুক।