• পিতা-পুত্রের হত্যাকাণ্ডে ১৩ জনের যাবজ্জীবন
    বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও বহরমপুর: মুর্শিদবাদের সামশেরগঞ্জে বাবা ও ছেলেকে নৃশংস খুনের ঘটনার ৮ মাস ১০ দিনের মাথায় সাজা ঘোষণা হল। সোমবার ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতের বিচারক অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও তিনমাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন সাজা ঘোষণার জন্য জঙ্গিপুর মহকুমা আদালত চত্বরে নিরাপত্তা ছিল আঁটোসাঁটো।

    প্রসঙ্গত, গত ১২ এপ্রিল ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের সময় খুন হয়েছিলেন সামশেরগঞ্জের হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর ছেলে চন্দন দাস। বাড়িতে ঢুকে তাঁদের নৃশংসভাবে খুন করা হয়। সোমবার আদালত অভিযুক্ত দিলদার নদাব, আসমাউল নদাব ওরফে কালু, এনজামুল হক ওরফে বাবলু, জিয়াউল হক, ফেকারুল শেখ ওরফে মহক, আজফারুল শেখ ওরফে বিলাই, মনিরুল শেখ ওরফে মনি, একবাল শেখ, নুরুল ইসলাম, সাবা করিম, হজরত শেখ ওরফে হজরত আলি, আকবর আলি ওরফে একবর শেখ ও ইউসুফ শেখকে দোষী সাব্যস্ত করে। এদিন তাদের সাজা ঘোষণা হয়। আদালত এই রায়ে ডিএনএ প্রমাণের উপরও গুরুত্ব দিয়েছে। অপরাধে ব্যবহৃত অস্ত্রে লেগে থাকা রক্তের ডিএনএ-র সঙ্গে মৃত ব্যক্তিদের ডিএনএ মিলে গিয়েছে। এদিন খুনের মামলার তদন্তে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য সিটের সদস্যদের সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিনন্দন জানালেন রাজ্য পুলিশের এডিজি(সাউথ বেঙ্গল) সুপ্রতীম সরকার। তিনি বলেন, ‘গোটা দেশে এটা দ্বিতীয় মামলা যেখানে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তদের সাজা দেওয়া সম্ভব হল।’ 

    উল্লেখ্য, ডিআইজি(মুর্শিদাবাদ রেঞ্জ) ওয়াকার রাজার নেতৃত্বে গঠিত সিট এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ করে ৫৬ দিনের মাথায় চার্জশিট দেয়। এই নৃশংস খুনের মামলার এফআইআরে প্রথমে পাঁচজনের নাম থাকলেও তদন্তে নেমে সিট ১৩ জনের যোগসূত্র খুঁজে পায়। এরপরই ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বীরভূম, হাওড়া, ফরাক্কা, জঙ্গিপুরে অভিযান চালিয়ে পলাতকদের গ্রেফতার করে সিট। সিট এই তদন্তে রাজ্য এসটিএফ, লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ, সিআইডির সাহায্য নিয়েছে। ওয়াকার রাজা বলেন, ‘এই রায়ের ফলে আইনের উপর সাধারণ মানুষের ভরসা আরও বাড়বে। আমরা খুশি। ডিজি এবং এডিজি সাউথ বেঙ্গল সবরকম  সাহায্য করেছেন এই মামলার তদন্তে।’  এই তদন্তের বিশেষত্ব হল, সিটের গোয়েন্দারা ঘটনার সময় অভিযুক্তদের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন সংগ্রহ করে গুগল ম্যাপে তা প্রতিস্থাপন করে অকাট্যভাবে প্রমাণ করেছেন, ঘটনাস্থলে তাদের উপস্থিতি। দ্বিতীয়ত, ঘটনাস্থলে ধৃতদের ঢোকা-বের হওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ সামনে রেখে আদালতে প্রত্যেক অভিযুক্তের গেট-প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট প্রমাণ করে দিয়েছে, অভিযুক্তদের খুনের সময় উপস্থিতি। গেট প্যাটার্ন কী? প্রত্যেক মানুষের হাঁটা-চলার নিজস্ব ছন্দ ও ভঙ্গিমা থাকে। যা অন্যের থেকে আলাদা। অপরাধস্থলে সংগৃহীত সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে অভিযুক্তদের বাস্তবে হাঁটা-চলার ছন্দ মেলানোর বিষয়টিকে ‘গেট প্যাটার্ন’ পরীক্ষা বলে। সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১০ বছরের অতিরিক্ত কারাদণ্ড ডাকাতি, লুটপাটের জন্য। ভারতে গণপিটুনিতে মৃত্যুর একাধিক কেস রয়েছে। তার মধ্যে এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে দু’টো অপশন খোলা ছিল। একটি যাবজ্জীবন, অন্যটা মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্ট ডেথ সেনটেন্স দিতে বারণ করছে। সেই পরামর্শ সবসময় বিচারক, বিচারপতিদের মাথায় থাকে।’ প্রয়াতের পরিবার ও আত্মীয়দের দাবি, দোষীদের মৃত্যদণ্ডই কাম্য।
  • Link to this news (বর্তমান)