বড়দিনে মূল আকর্ষণ ডেনমার্কের ঘণ্টা, রামপুরহাটের প্রাচীন চার্চে ব্যাপক ভিড়ের সম্ভাবনা
বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট : রাত পোহালেই বড়দিন। প্রভু যিশুর জন্মদিন। ক্রিসমাস। একেবারে সাজো সাজো রব চতুর্দিকে। আর বড়দিন উপলক্ষ্যে সেজে উঠেছে ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত রামপুরহাটের চার্চ। প্রাচীন এই চার্চের মূল আকর্ষণ কিন্তু ডেনমার্কের পাঁচ কুইন্ট্যাল ওজনের বিশাল ঘণ্টা। কাজেই আগামী বৃহস্পতিবার প্রভু যিশুকে শ্রদ্ধা জানাতে বড়দিনে কয়েক হাজার শিশু ও তাঁদের অভিভাবকদের ঠিকানা হয়ে উঠবে এই চার্চ।
ইংরেজ জমানায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিস্তার লাভ করেছিল খ্রিষ্টধর্ম। লালমাটির বীরভূমের রামপুরহাটও কিন্তু সেই প্রভাবের বাইরে ছিল না। সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে পুরনো এই চার্চ। রামপুরহাটে খ্রিষ্টধর্মের প্রচার হয়েছিল এইচ এম ক্যাম সাহেবের উদ্যোগে। তিনিই ১৯০২ সালে রামপুরহাটের রেলপাড়ায় ৩৬ টাকায় আড়াই বিঘে জমি কিনে (বর্তমানে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড) এই চার্চের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ডেনমার্ক থেকে বিভিন্ন ধাতু দিয়ে তৈরি বড় এই ঘণ্টা আনা হয় এখানে। যা এখন ঘণ্টাঘর নামেই পরিচিত। এই ঘণ্টাই এই গির্জার সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ। বড়দিন, গুড ফ্রাইডে, নিউ ইয়ার্স ও নিত্যদিনের প্রার্থনার সময় আজও সেই ঘণ্টা বাজানো হয়। এক সময় সেই ঘণ্টার আওয়াজ দূরবর্তী বহু গ্রাম থেকে শোনা যেত। এখন অবশ্য নগরায়ানের ফলে সেই আওয়াজ আর শোনা যায় না। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চার্চ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শ্রীনাথ বিশ্বাস। বর্তমানে তাঁর বংশধররাই চার্চের কাজ পরিচালনা করে আসছেন।
শতাব্দী প্রাচীন এই চার্চে এখনও প্রভু যিশুর ক্রস, প্রার্থনাঘর, টেবিল এবং ডেস্ক রয়েছে। পুরনো সীমানা প্রাচীর ভেঙে যাওয়ায় টিআরডিএ-র তরফ থেকে ১৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। সেই টাকায় গির্জার প্রাচীর, গেট ও কালচারাল স্টেজ নির্মিত হয়েছে।
২৭ বছর ধরে এই গির্জার ফাদার অতীশ বিশ্বাস। ফাদার বলেন, বড়দিন আমাদের জীবনে অনেক শুভকামনা নিয়ে আসে। কেকের সুগন্ধের মতোই সুন্দর হয়ে ওঠে সবকিছু। বড়োদিনে মধ্যরাতে প্রার্থনার পাশাপাশি সকাল ন’টার সময় ঘণ্টা বাজানো হবে। তখন শিশুদের মধ্যে কমলালেবু, চেক ও চকোলেট বিলি হবে। এছাড়া সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হবে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর নিয়ম করে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় সহ পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা প্রভু যিশুকে শ্রদ্ধা জানাতে চার্চে আসেন। আশিসবাবু বলেন, শুধু খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী মানুষরাই নন, যিশুকে শ্রদ্ধা জানাতে নানা ধর্মের মানুষের আনাগোনায় এক মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে এই চার্চ। বড়দিনের উৎসব উপলক্ষ্যে গির্জার বাইরে বসে মেলাও।