• ক্যাসেটের রাজপ্রাসাদে রোজ সিঁধ কাটে চোর, দেখেও হেসে মুখ ঘুরিয়ে নেন দোকান মালিক
    বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অমিত চৌধুরী, তারকেশ্বর: যদি কোনওদিন কোনও ক্রেতা আসে, এসে যদি দু-একটা ক্যাসেট হাতসাফাই করে সরিয়েও ফেলে, তাহলে সে দিনটা একটু খুশি খুশি কাটে তারকেশ্বরের বদিয়া রহমানের। হোন বা চোর, কেউ এসে ক্যাসেট তো নিচ্ছে। তিনি এতেই খুশি। অন্তত শুনবে তো মানুষটা। কাজে তো আসবে ক্যাসেটটা। বদিয়া রহমান বিষয়টিকে এভাবে দেখার চেষ্টা করেন।

    সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের গল্পে চোর-গৃহস্থকে নিয়ে মজার মজার ঘটনা আছে। তবে বাস্তবে বদিয়া রহমানের মতো মানুষও আছেন ধরাধামে। যাঁর কাছে চোর হল লক্ষ্মী। তাঁর জীবনের ঘটনাও খানিকটা বইয়ে পড়া গল্পেরই মতো।৪০ বছর আগে তারকেশ্বরে স্টেশন রোডে রেলের জায়গায় বদিয়াবাবু ক্যাসেটের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, হাওড়া, বর্ধমান থেকে পাইকারি ও খুচরো বিক্রেতারা কিনতে আসতেন। কিনতেন সাধারণ মানুষও। ন’য়ের দশকে তারকেশ্বর সুপার ক্যাসেট সেন্টারের জনপ্রিয়তা এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, মুম্বই থেকে দেখতে এসেছিলেন সঙ্গীতকার গুলশন কুমার। তারকেশ্বর মন্দির নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তৈরি করেছিলেন গানের অ্যালবাম। এখনও শিব ভক্তদের কাছে সে গান প্রবল জনপ্রিয়। ধীরে ধীরে ক্যাসেটের জায়গা দখল করে সিডি। কমতে থাকে ক্যাসেটের চাহিদা। তবে এখনও কিছু মানুষ ক্যাসেট কেনেন। সে সময় জনপ্রিয় ডিলার ছিলেন তারকেশ্বরের বদিয়া রহমান। তাঁর দোকান ছিল রাজপ্রাসাদের মতো সাজানো গুছোনো। এখনও তাঁর কাছে কয়েক হাজার জনপ্রিয় গানের ক্যাসেট রয়ে গিয়েছে। এখনও হাওড়া, বর্ধমান, নদীয়া সহ একাধিক জায়গা থেকে কিছু মানুষ কিনতে আসেন। তাঁদেরই অনেকে ফাঁক পেলে চুরি করেন। বদিয়া কিছু বলেন না। ঠোঁটের ফাঁকে মুচকি হাসি ফোটে। অলক্ষ্যে প্রশ্রয়ই দেন হাতসাফাইকে। বলেন, ‘যদি চুরি করেও নিয়ে গিয়ে কেউ গান শোনেন তাহলেও ক্ষতি নেই। ক্যাসেটটা অন্তত শ্রোতার কাছে পৌঁছল তো।’ তিনি জানান, ক্রেতার আশায় বসে থাকেন। লোক হয় না। মনে হয় একদিন ওজন দরে বিক্রি করে দিতে হবে এককালের জনপ্রিয় সব ক্যাসেট। একসময় ব্যবসা করতে গিয়ে রাতে ঘুমোনোর সময় ছিল না। আজ ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থাকা। 

    সাজন, রাম-লক্ষণ, হাওয়া হাওয়া ও উত্তম দাসের হাস্যকৌতুকের অ্যালবাম কিনতে দোকানে লাইন পড়ত। পুজোর সময় মহালয়া, কালীপুজোর সময় পান্নালাল ভট্টাচার্য এবং শ্যামাসঙ্গীতের বিক্রি তুঙ্গে উঠত। আজ সেসবের কোনও চাহিদাই নেই। এখন সিডিরও বাজার নেই। গান শোনার দখল নিয়েছে মোবাইল। তবে সাউন্ড সিস্টেম যাঁরা ভাড়া দেন তাঁদের একাংশ এখনও মনে করেন ক্যাসেটের মতো উচ্চমানের শব্দ সিডি বা চিপে পাওয়া যায় না। সাউন্ড বক্স ব্যবসায়ীদের একাংশ তাই এখনও বদিয়ার ক্রেতা। বর্তমানে দোকানে যেটুকু সঞ্চয় অবশিষ্ট আছে তা শ্রোতাদের কাছে পৌঁছলে তবে শান্তি মিলবে বদিয়ার। তাই ক্যাসেট চুরিও তাঁকে তৃপ্তি দেয়। লোকে অন্তত প্লেয়ারে চালাক, শুনুক অন্তত ক্যাসেটের গান।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)