পিনাকী ধোলে, বোলপুর: চিরাচরিত প্রথা মেনে মঙ্গলবার, ৭পৌষ ঐতিহ্যবাহী পৌষ উৎসবের সূচনা হল। ভোরে গৌরপ্রাঙ্গণে বৈতালিক, শান্তিনিকেতন গৃহের সানাই ও সকালে ছাতিমতলায় ব্রহ্ম উপাসনার মধ্য দিয়ে পৌষ উৎসবের সূচনা হল। উপাসনা শেষে ‘আগুনের পরশমণি...’ গেয়ে শোভাযাত্রা করে সকলে উদয়নগৃহে পৌঁছন। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর ব্যবহৃত চেয়ারে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন জেলাশাসক ধবল জৈন, বিশ্বভারতীর উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, আশ্রমিক, ছাত্রছাত্রীরা। পৌষমেলার প্রথমদিনই ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ শান্তিনিকেতনে বিপুল মানুষের সমাগম হয়। মেলা গমগম করে। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই মেলা চলবে। উপাচার্য বলেন, পৌষ উৎসব ও মেলা শুরু হল। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সুন্দরভাবে সবকিছুর আয়োজন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয় সেদিকে আমাদের নজর থাকবে।
এদিন মেলা প্রাঙ্গণে বিনোদন মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে পৌষমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। তারপর বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন উপাচার্য, জেলাশাসক সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। এদিনই মেলা প্রাঙ্গণে বিনোদন মঞ্চে বাউল, কীর্তন প্রভৃতি পরিবেশিত হয়। সকাল থেকেই বিনোদন মঞ্চে বাউল ফকিরের গান, সানাই, মনসামঙ্গল, কীর্তন গান আদিবাসী নৃত্য, ছৌ নৃত্য প্রভৃতি অনুষ্ঠিত হয়। বিনোদন মঞ্চে নানা ধরনের লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে। বিশ্বভারতী আশ্রমিকদের কথায়, এই মেলা এখন শুধু বীরভূম বা বোলপুরবাসীর নয়, দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে এ এখন আন্তর্জাতিক। বিশ্বভারতীর যেসকল প্রাক্তনী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন তাঁদের কাছে পৌষ উৎসবই পুনর্মিলনের উৎসব। দেশ-বিদেশের কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী থেকে শুরু করে বাউল-ফকিরদের মিলনমেলা। প্রথমদিন মেলায় বিক্রি বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মেলা উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় যানজট হয়। তবে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। যানজট এড়াতে সক্রিয় রয়েছে মেলা কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন। মেলা চলাকালীন বিশেষ কিছু রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকটি রাস্তা ওয়ান ওয়ে করা হয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম সোনাঝুরি হাটের রাস্তা। এছাড়াও, যানজট এড়াতে মেলা ঢোকার রাস্তায় একাধিক ‘ড্রপ গেট’ বসানো হয়েছে। প্রতিটি প্রবেশপথে নির্দিষ্ট পার্কিং জোন করা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, মেলায় সাধারণ মানুষের অসুবিধা যাতে না হয় তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, মেলার নিরাপত্তার জন্য তিনশোর বেশি অস্থায়ী সিসি ক্যামেরা, দশটি ওয়াচ টাওয়ার, প্রায় ৩০টির বেশি পুলিশ সহায়তা শিবিরের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। মেলায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে, অ্যান্টি ক্রাইম টিম, বিপর্যয় মোকাবিলা দল, মহিলা পুলিশ, র্যাফ, কুইক রেসপন্স টিম, সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রথম দিন নির্বিঘ্নেই মেলা সম্পন্ন হয়েছে।
পৌষউৎসবের সূচনা শান্তিনিকেতনের ছাতিমতলায়। মঙ্গলবার।-নিজস্ব চিত্র