• প্রতারণা! ক্ষুব্ধ মতুয়া সম্প্রদায় আজ মহা বিক্ষোভে
    বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও বারাসত: ঠাকুরনগরের ক্যাম্প থেকে মতুয়া কার্ড ও ধর্মীয় শংসাপত্র জোগাড় করেও শেষরক্ষা হচ্ছে না। এসআইআর পর্বে একদিকে যেমন ভোটার তালিকা থেকে লক্ষ লক্ষ নাম বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, তেমনি নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘ঝোলানো গাজর’ও এখন অধরা! এই আবর্তে সোমবার বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের ‘স্বীকারোক্তি’—‘ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ গেলেও, আমাদের সহ্য করে নিতে হবে’। এতেই মতুয়াদের ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় নাগরিক ও ভোটার হওয়ার স্বপ্ন লালন করার সমস্ত রসদ জুগিয়েও, কেন তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করল বিজেপি? নাগরিকত্ব কোথায়? কেন এই প্রতারণা? প্রশ্ন করছেন উদ্বাস্তুরা। জবাব চাইতে আজ, বুধবার ঠাকুরবাড়িতে মহাবিক্ষোভে শামিল হবেন মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজন। থাকবেন পাগল, গোঁসাই ও দলপতিরাও।

    দেড় মাস ধরে শান্তনুবাবুর উদ্যোগে ঠাকুরবাড়ির নাটমন্দিরের ক্যাম্প থেকে মতুয়া কার্ড ও ধর্মীয় শংসাপত্র ঢালাও বিলি করা হয়েছে। মাথাপিছু খরচ হয়েছে হাজার টাকা। সেই টাকা জলেই গিয়েছে। মঙ্গলবার রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ তথা মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি মমতা ঠাকুরের তোপ, ‘মতুয়ারা অপমানিত, ক্ষিপ্ত। দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের আবেগ নিয়ে খেলে, ছুড়ে ফেলে দিল বিজেপি। শুধু প্রতিশ্রুতিই যে বিলি করে যাওয়া হয়েছিল, তা বিলক্ষণ বুঝেছেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। শান্তনু ঠাকুরের কাছে জবাব চাইতে যাবে মানুষ।’ মতুয়া দলপতি সুকেশ হালদারের কথায়, নাগরিকত্ব পেলে, ভোটাধিকারও থাকত। স্রেফ প্রতারণা করা হল। এখন বাস্তবটা বুঝে মতুয়াদের সহ্য করে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন শান্তনু ঠাকুর! তাঁর প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল?

    বিপদ বুঝে এদিন ভোটার তালিকা থেকে মতুয়াদের নাম বাদ যাওয়ার দায় সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ঘাড়েই চাপিয়েছেন শান্তনুবাবু। সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘নাম বাদ যাবে কেন, তা কমিশনের কাছে জানতে চান। আমার কাছে কেন? আমি কী নাম বাদ দিচ্ছি!’ সব মিলিয়ে নাগরিকত্ব নিয়েও সংশয় বেড়েছে মতুয়া মহলে। শান্তনু ঠাকুরের ক্যাম্পে নাগরিকত্বের জন্য এখন পর্যন্ত আবেদন করেছেন ২০ হাজার মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের দাবি, এর মধ্যে তিন-চার হাজার ব্যক্তি শংসাপত্র পেয়ে গিয়েছেন। গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের ক্যাম্পে আবেদনের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। দাবি করা হচ্ছে, এর মধ্যে ১৫০-২০০ জন মতুয়া নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট পেয়েছেন। যদিও বিদেশ মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অন্য কথা বলছে। মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, এবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলার ১২টি উদ্বাস্তু পরিবার ভারতীয় নাগরিকত্ব পেয়েছে। তাহলে কীসের ভিত্তিতে ওই দাবি? অল ইন্ডিয়া নমঃশূদ্র বিকাশ পরিষদের চেয়ারম্যান মুকুল বৈরাগীর কথায়, ‘এখানেই তো মূল ভাঁওতাবাজি। নাগরিকত্বের জন্য দুটো শংসাপত্র রয়েছে। একটি বিবাহ সূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার সার্টিফিকেট অব রেজিস্ট্রেশন এবং আরেকটা উদ্বাস্তু হিসেবে নাগরিকত্ব পাওয়ার সার্টিফিকেট অব ন্যাচারালাইজেশন। দ্বিতীয় শংসাপত্রটি পেয়েছেন, এখন পর্যন্ত এমন মাত্র ১৪-১৫টা পরিবারের খোঁজ পেয়েছি।’   
  • Link to this news (বর্তমান)