• সোদপুরের ফ্ল্যাটে দুই বোনের দেহ উদ্ধার
    বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: সোদপুরে আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে দুই বোনের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম সবিতা দত্ত চট্টোপাধ্যায় (৬৩) ও কণিকা দত্ত (৫৭)। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, দীর্ঘদিন না খাওয়ার ফলে শারীরিক দুর্বলতার কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মানসিক সমস্যাও ছিল। প্রশ্ন উঠছে, দীর্ঘদিন না খেয়ে আবাসনের বাসিন্দা দুই মহিলার মৃত্যু হল অথচ কেউ তা আগে জানতে পারল না কেন? 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সবিতাদেবী ও কণিকাদেবী সোদপুরে হরিশচন্দ্র দত্ত রোডের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। বেশিরভাগ সময়ই তাঁদের ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ থাকত। অন‍্যান‍্য আবাসিকদের সঙ্গে তাঁরা খুব একটা মেলামেশা করতেন না। প্রায় ১৫ দিন আগে এক পরিচিত তাঁদের খোঁজ নিতে ফ্ল্যাটে এসেছিলেন। তখন তিনি দুই মহিলাকে অসুস্থ দেখে গিয়েছিলেন। বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন দু’জনেই। গত রবিবার রাতে তিনি ফের প্রৌঢ়াদের দেখতে যান। অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না পাওয়ায় তাঁর সন্দেহ বাড়ে। এরপরই দরজায় ধাক্কা দিতে দরজা খুলে যায়। ঘরে ঢুকে তিনি ছোটো বোনের নিথর দেহ মেঝেয় পড়ে থাকতে দেখে এলাকার অন্যান্যদের জানান। খবর দেওয়া হয় খড়দহ থানায়। পুলিশ এসে ফ্ল্যাটের সামনের ঘর থেকে ছোটো বোন কণিকাদেবী ও পাশের ঘর থেকে বড়ো বোন সবিতাদেবীর মৃতদেহ উদ্ধার করে। ইতিমধ্যে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। চিকিৎসক জানিয়েছেন, অসুস্থতা ও শারীরিক দুর্বলতা থেকেই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের আত্মীয় পায়েল দত্ত বলেন, সম্পর্কে ওঁরা আমার পিসি হন। আমরা যতটা পেরেছি পাশে দাঁড়িয়েছি। আমাদের বাড়ি থেকে মাঝেমধ্যে খাবার পাঠানো হতো। সেটাও তাঁরা বহু সময় না খেয়ে ফেলে দিতেন। ওঁদের আর্থিক সমস্যা ছিল। পাশাপাশি মানসিক সমস্যাও ছিল। কখনও ফোন করে সমস্যার কথা বলতেন না। আমরা এলে খোঁজ পেতাম। ফ্ল্যাটের আবাসিক পুষ্পাঞ্জলি সেন বলেন, সবিতাদেবীর স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই দুই বোনের কোনও রোজগার ছিল না। তাছাড়া দু’জনেই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ওঁদের এক আত্মীয় এসে মাঝে মধ্যে খোঁজ খবর নিতেন। তাঁরা কারও সঙ্গে খুব একটা মেলামেশা করতেন না। বেশিরভাগ সময়ই ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ থাকত। না-খেতে পেয়েই হয়ত অসুস্থ হয়ে দু’জনে মারা গিয়েছেন। তবে দুই প্রবীণার মর্মান্তিক পরিণতি ভাবাচ্ছে নাগরিক সমাজকে।
  • Link to this news (বর্তমান)