• ক্রিসমাসে ফ্রুট, প্লামকে টক্কর ছানার কেকের
    বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কমলালেবু আর মোয়ার সঙ্গে কেক না হলে ২৫ ডিসেম্বর বেমানান। বাঙালির ক্রিসমাস উদযাপন তাই কেক-ময়। সেই আনন্দে এবার সঙ্গত করছে জিএসটি। করের হার কমায় কেকের দাম সামান্য হলেও স্বস্তি দিচ্ছে। ফ্রুট, প্লাম হোক বা অন্য কোনও ইংলিশ কেক, এই সাহেবিয়ানার সঙ্গে এবছর পাল্লা দিচ্ছে বাঙালির চিরন্তন ছানার কেকও, হুগলি জেলায় যার আদি নিবাস। এই শীতপ্রধান মিষ্টান্ন এখন শহরের গণ্যমান্য অতিথি।

    তবে কেক খেয়েই তো শুধু খুশি থাকা নয়। উৎসবের ওম গায়ে মেখে দোকানে কেক দেখে, নেড়েচেড়ে কেনার আনন্দও ক্রিসমাসের অন্যতম অঙ্গ। নামজাদা ব্র্যান্ড মিও আমোরে অনলাইন ফুড ডেলিভারি সংস্থাগুলির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কেক বিক্রি করছে ঠিকই। কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা বলছে, অনলাইনের ক্রেতার হার মোট ক্রেতার দুই থেকে তিন শতাংশ মাত্র। সংস্থার মার্কেটিং ম্যানেজার ময়ূরী দত্তের কথায়, ‘প্যাকেটের মধ্যে থাকা কেকটি কেমন তা ক্রেতারা দেখে সন্তুষ্ট হয়ে তারপর কিনতে পছন্দ করেন। সবাই মিলে দোকানে এসে কেনাকাটা করাটাই পছন্দ করেন। শীতকালে যে হরেক রকম খাবার মিও আমোরের শোরুমগুলিতে মেলে, ক্রিসমাসকে কেন্দ্র করে সেগুলিরও বাজার থাকে জমজমাট। এবার স্বাদের সঙ্গেই বাড়তি লাভ জিএসটির সুবিধা।’ তিনি জানান, সেপ্টেম্বর থেকে জিএসটির সুবিধা পাচ্ছেন ক্রেতারা। ১২ থেকে ৫ শতাংশে নেমেছে করের হার। এবার কেকের দাম তাই নাগালেই রয়েছে মধ্যবিত্তের। বাজারও তাই আশা জাগাচ্ছে। ক্রিসমাস কেকের তালিকায় পুরনোর সঙ্গে এবার জায়গা করে নিয়েছে রিচ চকোলেট লোফ। ইতিমধ্যেই তা বাজারে সাড়া ফেলেছে।

    পর্তুগিজরা আদি সপ্তগ্রামকে কেন্দ্র করে বাংলায় ঘাঁটি গেড়েছিল। তবে তারপর বাঙালির খাদ্যাভ্যাসকে আপন করে নেওয়া তাদের ক্ষেত্রে সহজ হয়নি। তাই দুধ কাটিয়ে ছানা তৈরি করে নিজেদের খাবার তৈরি করতে শুরু করে তারা। সেই ছানার নাম কটেজ চিজ। ধীরে বাঙালি ছানাকে আপন করে নেয়। ব্যান্ডেল সেই সময় এই কটেজ চিজের একপ্রকার হাব হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। তাই এই ছানার নাম হয়ে যায় ব্যান্ডেল চিজ। সেই চিজ দিয়ে কেক তৈরি বা ছানার কেক একসময় সংস্কৃতি হয়ে উঠেছিল বাংলার। হুগলিতে এখনও সেই ঐতিহ্য একইরকম উজ্জ্বল। স্বতন্ত্র হুগলি জেলা মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান অমিতাভ দের কথায়, ‘একশ্রেণির মানুষ ক্রিসমাসকে কেন্দ্র করে কেকের জন্য মুখিয়ে থাকেন। ড্রাই ফ্রুট দিয়ে সাজানো সেই কেকের স্বাদ অমৃতসমান।’ অমিতাভবাবুর নিজের প্রতিষ্ঠান ফেলু মোদকেও থাকে এই কেকের সম্ভার। তাঁর কথায়, ‘নতুন প্রজন্মের যাঁরা এই কেক ততটা পছন্দ করেন না, তাঁরা কিন্তু ঝোঁকেন নতুন গুড়ের সন্দেশে, রাবড়িতে।’ বাঙালির সনাতনী স্বাদ সেখানেও ভরপুর। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন মিষ্টি উদ্যোগের অন্যতম সদস্য কালীমাতা সুইটসের কর্ণধার স্বরূপ দত্তের কথায়, ‘বহু ক্রেতা অপেক্ষা করে থাকেন ক্রিসমাসের ছানার কেকের জন্য। আমরা দিনকয়েক আগে থেকেই তা তৈরি করতে শুরু করেছি। ১৫ টাকা, ৫০ টাকা ও ১০০ টাকার কেকের পাশাপাশি যাঁরা পেল্লায় কেক চান, তাঁদেরও ফেরাবো না আমরা। এই স্বাদ আসলে ক্রিসমাসকে কেন্দ্র করে অতি অল্প সময়ের জন্য মেলে।  ক্রেতারা তার কদরও করেন।’ ওয়েস্ট বেঙ্গল বেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা আরিফুল ইসলাম অবশ্য দাবি করেছেন, ‘তুলনামূলক কম বাজেটের কেকে জিএসটির সুবিধা ক্রেতারা পাচ্ছেন না।’ তাঁর দাবি, মাখন থেকে শুরু করে ড্রাই ফ্রুটসের দাম এতটাই চড়া যে, তা ঢেকে দিচ্ছে জিএসটির সুবিধা। পাশাপাশি প্যাকেজিং পেপারের জিএসটি ১২ থেকে বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ করা হয়েছে। কেকের সামগ্রিক দামে তার প্রভাবও যথেষ্ট। ফলে ছোট কেক ব্যবসায়ীরা মার খাচ্ছেন।’
  • Link to this news (বর্তমান)