• হরপ্পায় মিলেছিল অস্তিত্ব, পাঁচ দশক ধরে হাতে গড়া ‘বাঁশির পুতুল’ বেচেন হাওড়ার রাজকুমার
    বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: জিরাফ, মাছ কিংবা নানা ধরনের পাখি। হাতে গড়া ছোট্ট ছোট্ট মাটির পুতুল। এসব কি কেবলই পুতুল? না, তাতে ফুঁ দিলেই বেজে ওঠে বাঁশি। নাম বাঁশির পুতুল। সেই পুতুলকে আবার ব্যবহার করা যায় লকেট হিসেবেও। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে নিজের হাতে বানিয়ে বিভিন্ন মেলায় এই শিল্পকর্ম বিক্রি করে আসছেন হাওড়ার রাজকুমার দেবনাথ। শুধু বিক্রি নয়, গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া মাটির শিল্পকর্মকে ফিরিয়ে আনতে প্রচারও করেন তিনি।

    হাওড়ার সাঁতরাগাছির বাকসাড়ার বাসিন্দা রাজকুমার দেবনাথ। বয়স ৬১। নিঃসঙ্গ মানুষটি বাঁশির পুতুল সৃষ্টিতেই যেন জীবনের যাবতীয় সুর খুঁজে নিয়েছেন। পূর্বপুরুষের ভিটে ছিল ওপার বাংলার ঢাকায়। ছোটবেলায় খেলার ছলে এই ধরনের পুতুল তৈরি শিখেছিলেন এক বন্ধুর মায়ের কাছ থেকে। তারপর নিজের হাতের জাদুতেই বাঁশির পুতুল তৈরি করাকে নেশা ও পেশা করে তুলেছেন রাজকুমারবাবু। এখন বাঁশির পুতুল বিক্রি করেন বিভিন্ন মেলায়। কখনও কলকাতার গোলপার্ক বা নন্দন চত্বরে রাজকুমারবাবুকে পসরা সাজিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। আবার শীত পড়তেই শান্তিনিকেতন, বাঁকুড়ার লালমাটির দেশে চলে যান বিক্রির উদ্দেশ্যে। কুমোরটুলি থেকে এঁটেল মাটি নিয়ে আসেন বাড়িতে। তারপর সেই মাটিকে ছোট-মাঝারি-বড় বিভিন্ন সাইজের পুতুলের আদল দেন। একটিমাত্র কাঠি দিয়ে অদ্ভুত শিল্প নৈপুণ্যে সেগুলিকে পরিণত করেন বাঁশিতে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাখি, জিরাফ, গোরু, বাঘ, মাছ, এমনকী ঘোড়ার পিঠে সওয়ার রাজকন্যা।

    রাজকুমারবাবুর কথায়, দিনে প্রায় দশটি ছোট পুতুল তৈরি করেন তিনি। তবে বড় বাঁশির পুতুল তৈরি করতে প্রায় ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। ১০০ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বাঁশির পুতুল মেলে তাঁর কাছে। সম্প্রতি কাঠবাদামের খোলা দিয়ে তৈরি করেছেন গণেশের মুখের আদলের বাঁশি। মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ির জীর্ণ ঠাকুর দালানে বসে সদ্য তৈরি মাটির বাঁশিগুলি শুকোতে দিচ্ছিলেন তিনি। বললেন, ‘শীত পড়তেই এবার বিভিন্ন মেলায় ডাক পড়বে। এসময় বিক্রি ভালো হয়। আজকাল মেয়েরা বিভিন্ন ধরনের পোড়ামাটির অলঙ্কার পরে। আমার কাছে বাঁশির পুতুলের লকেট পাওয়া যায়। এটার খুব চাহিদা।’

    দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামবাংলার লুপ্তপ্রায় এই মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রচার করছেন রাজকুমারবাবু। একসময় চড়ক, গাজন, রাশের মেলায় বাঁশির পুতুলের জন্য আবদার করত খুদেরা। আজ সেখানে জায়গা নিয়েছে প্লাস্টিকের বাঁশি। তিনি বলেন, ‘আমি চাই আগামী প্রজন্মকে এই শিল্পকর্ম শেখাতে। প্লাস্টিকের খেলনার পরিবর্তে বাবা-মায়েরা ওদের হাতে বাংলার বাঁশির পুতুল তুলে দিক।’ গবেষকরা বলেন, বাঁশির পুতুল হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোর মতো জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ির সময় মিলেছিল। -নিজস্ব চিত্র। 
  • Link to this news (বর্তমান)