যাদবপুরে অভিজাত আবাসন থেকে ৬৭ লক্ষের গয়না হাতিয়ে চম্পট, ধৃত চালক ও পরিচারিকা, কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনে বিয়ের ইচ্ছা ছিল যুগলের
বর্তমান | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: যাদবপুরের অভিজাত বহুতলে কাজ করতে এসে আলাপ। সেখান থেকে তারা জড়িয়ে পড়ে প্রেমের সম্পর্কে। ঠিক করে, ঘর বাঁধবে দু’জন। একজন গাড়িচালক, অন্যজন পরিচারিকা। কিন্তু বিয়ে করলে তারা থাকবে কোথায়? এরপর মাথায় আসে, কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনবে যুগল। কিন্তু এত টাকা আসবে কোথা থেকে? যে ব্যবসায়ীর বাড়িতে তারা কাজ করতো, সেখান থেকেই সোনার অলংকার হাতানোর ফন্দি আঁটে দু’জনে। এরপর পরিকল্পনা মতো ধীরে ধীরে সোনার গয়না সরাতে শুরু করে তারা। সব মিলিয়ে ৬৭ লক্ষ টাকার সোনার গয়না হাতানোর পর দু’জনেই কাজ ছেড়ে পালিয়ে যায়। বাড়ির মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে গাড়িচালক কাশীনাথ হালদার ও পরিচারিকা অপর্ণা সর্দারকে গ্রেফতার করেছে যাদবপুর থানা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাশীনাথ ও অপর্ণা যাদবপুরের ওই ফ্ল্যাটে বছর পাঁচেক ধরে কাজ করছিল। প্রথমে কাজে যোগ দেয় কাশীনাথ। পরে আসে অপর্ণা। মালিক ও মালকিন দু’জনেই সকালে কাজে বেরিয়ে যান। ফলে খালি বাড়ি দেখভালের দায়িত্ব ছিল যুগলের উপর। একসঙ্গে থাকার ফলে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা ঠিক করে, বিয়ে করবে। কিন্তু মাথার তলায় ছাদ না থাকায় সেই আশা পূরণ হচ্ছিল না। সেখান থেকেই ফ্ল্যাট কেনার চিন্তা মাথায় আসে। কিন্তু তারা যে টাকা বেতন পায়, তা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা দূরঅস্ত, সংসার চালানোর পর বাড়ি ভাড়ার টাকা জোগাড় করাই কঠিন। তখনই মালকিনের সোনার গয়না হাতানোর ফন্দি আঁটে তারা। তারা জানতো, কোন আলমারিতে টাকা, আর কোন লকারে গয়না থাকে। আলমারির চাবি কোথায় থাকে, তাও জানতো তারা। এরপর তারা ধীরে ধীরে ওই লকার থেকে গয়না সরাতে শুরু করে। দিন তিনেক আগে হঠাৎই তারা কাজ ছেড়ে পালিয়ে যায়। আচমকা কাজ ছেড়ে দেওয়ায় সন্দেহ হয় মালিকের। তিনি আলমারি খুলে দেখেন, সব গয়না উধাও। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬৭ লক্ষ টাকা। শেষমেশ তিনি যাদবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ ওই ফ্ল্যাটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। তাতে স্পষ্ট দেখা যায়, ওই দু’জন গয়না হাতাচ্ছে। আবাসন থেকে তাদের বেরিয়ে যাওয়ার সময়ের ছবিও ধরা পড়ে। দেখা যায়, তাদের হাতে ব্যাগ রয়েছে। ওই আবাসনে ঢোকা বেরোনোর সময় চেকিং হয়। ওই দু’জনের কাছে ব্যাগ থাকলেও কেন সেদিন চেকিং হলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গাড়িচালক ও পরিচারিকার মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে জানা যায়, তারা যাদবপুরের আশপাশে রয়েছে। সেখানে হানা দিয়ে দু’দিন আগে ধরা হয় কাশীনাথকে। তাকে জেরা করে সোমবার পাকড়াও করা হয় অপর্ণাকে। মঙ্গলবার পরিচারিকাকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। অভিযুক্তের হয়ে লিগ্যাল এইডের আইনজীবী সৈকত রক্ষিত বলেন, দুই অভিযুক্তের কাছ থেকে কিছু উদ্ধার হয়নি। তারা যে অলংকার হাতিয়েছে, তার প্রমাণ কোথায়? সরকারি আইনজীবী সাজ্জাদ আলি খান বলেন, সিসি ক্যামেরায় গয়না হাতানোর ছবি ধরা পড়েছে। তাদের জেরা করলেই খোয়া যাওয়া গয়না উদ্ধার হবে। সওয়াল শেষে ওই মহিলাকে পুলিশি হেফাজতে পাঠায় আদালত।