মিল্টন সেন: বড়দিন উপলক্ষে সেজে উঠেছে ব্যান্ডেল চার্চ। বহু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে পর্তুগিজ গির্জা।
হুগলি জেলার ঐতিহাসিক স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম ব্যান্ডেল চার্চ। গঙ্গার তীরে অবস্থিত প্রায় চারশো বছরের প্রাচীন ব্যান্ডেল ব্যাসিলিকা বহু ইতিহাসের সাক্ষী।
সারা বছর ধরে পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে। ডিসেম্বর মাস পরতেই পর্যটকদের সেই সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যায়।
ইতিহাস অনুযায়ী ১৫৩৬ সালে পর্তুগিজরা সপ্তগ্রামে বাণিজ্য করতে এসে বসতি গড়ে তোলে। গোয়া থেকে অগস্টিন ফাদারদের নিয়ে এসে ১৫৯৯ সালে ব্যান্ডেলে ছোটো গির্জা তৈরি হয়।
১৬৩২ সালে মোঘল সম্রাট শাহজাহানের সৈন্যদের সঙ্গে পর্তুগিজদের যুদ্ধ হয়। ব্যান্ডেল গির্জা ধ্বংস করে মোঘল সৈন্যরা। পরে শাহজাহানই গির্জা তৈরির জন্য অর্থ দেন।
জমি দান করেন। সেখানে তৈরি হয় গির্জা। ব্যান্ডেল চার্চেই রয়েছে মাদার মেরির স্মারক। তাঁর ব্যবহার করা চাদরের এক টুকরো। পর্তুগালের লিসবন থেকে যা আনা হয়েছিল। চার্চে রয়েছে মাদার মেরির মূর্তি যা গঙ্গা নদী থেকে পাওয়া গিয়েছিল চারশো বছর আগে।
আর আছে কাঠের ৩৫ ফুট লম্বা মাস্তুল। যে মাস্তুল আজও প্রদর্শনী শালায় রাখা রয়েছে। জানা যায়, ১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে ব্যান্ডেলে তখন পর্তুগিজদের উপনিবেশ।
ওই বছর একদিন একটি পর্তুগিজ জাহাজ বঙ্গোপসাগরে প্রবল ঝড়ের মধ্যে পড়ে বাঁচার জন্য নাবিক ঈশ্বরের শরণাপন্ন হন। তিনি মাতা মেরির কাছে প্রাণভিক্ষা করেন। জাহাজ রক্ষা পায়। যাত্রা পথে কৃতজ্ঞতার প্রতীক হিসেবে ব্যান্ডেল চার্চে জাহাজের মাস্তুল দান করেন।
দীর্ঘ দিন সেই মাস্তুল চার্চের সামনে বসানো ছিল। একদিন ঝড়ে সেই মাস্তুল ভেঙে পড়ে। বর্তমানে ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগ সেই মাস্তুলকে সংরক্ষণ করেছে।
একটি কাঁচের বাক্সে প্রদর্শনীশালায় সেটা রাখা রয়েছে। প্রত্যেক বছর ক্রিসমাস উপলক্ষে সাজিয়ে তোলা হয় ব্যান্ডেল চার্চ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তরের সহায়তায় আলো দিয়ে সাজানোর পাশাপাশি গির্জার সামনে তৈরি হয় কৃত্রিম গোশালা। যেখানে যীশুর জন্ম বৃত্তান্ত তুলে ধরা হয়। ২৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে হয় মিড নাইট মাস। রাত ঠিক বারোটায় গাওয়া হয় ক্যারল।
বড়দিন ও বর্ষবরণের উৎসবে অত্যধিক ভিড়ের জন্য ২৫ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি দু' দিন ব্যান্ডেল চার্চ বন্ধ থাকে দর্শনার্থীদের জন্য।
তবে যেখানে গোশালা তৈরি হয়েছে সেখানে যাওয়ার অনুমতি থাকে। মেলা বসে চার্চ সংলগ্ন এলাকায়। পসরা নিয়ে সাজিয়ে বসেন দোকানীরা।