• পৌষ মেলায় আকর্ষণের কেন্দ্রে 'বিশ্বে বিশ্বকবি'
    আজকাল | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: জমে উঠেছে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা। বিশ্বভারতীর পৌষ উৎসবের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পূর্বপল্লীর মেলার মাঠে প্রতিবছরের মতো এবছরও প্রদর্শনী প্রাঙ্গনে নিজেদের ডালি সাজিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কলাভবন, শিল্প সদন, এনসিসি, পাঠভবন, যৌগিক কলা ও বিজ্ঞান ভবন নিজেদের নানা বিষয় তুলে ধরে প্রদর্শনী করেছে। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ রবীন্দ্রভবনও এবছর বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।

    রবীন্দ্রভবনের উদ্যোগে এবছর আয়োজন করা হয়েছে “বিশ্বে বিশ্বকবি” শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, যা সাধারণ মানুষ, আগত পর্যটক ও রবীন্দ্র অনুরাগীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছে। এই প্রদর্শনীর মূল বিষয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভ্রমণ এবং সেই ভ্রমণের সঙ্গে যুক্ত তাঁর ভাবনা, দর্শন ও সৃষ্টিশীলতার প্রভাব।

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৭ বছর বয়সে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথম ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। তাঁর শেষ বিদেশ যাত্রা ১৯৩৪ সালে শ্রীলঙ্কায়। এই ১৮৭৮ থেকে ১৯৩৪ — ৫৬ বছরের দীর্ঘ সময়ে তিনি বিভিন্ন প্রয়োজনে আনুমানিক পৃথিবীর ৩১টি দেশে একবার অথবা একাধিকবার ভ্রমণ করেন। সেই সময়ে জাহাজে বা উড়োজাহাজে করে বিশ্বপরিভ্রমণ ছিল অত্যন্ত কঠিন ও শ্রমসাধ্য কাজ। আর এই ভ্রমণ কোনও নিছক প্রমোদভ্রমণ ছিল না।

    তিনি প্রতিটি দেশের শিল্প, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য গভীরভাবে অনুভব ও অনুধাবন করে তার নির্যাস শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর উপযোগী করে প্রয়োগ করেন। ব্রহ্ম বিদ্যালয় ও বিশ্বভারতীর সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থায়, ঘরবাড়ির গঠনশৈলীতে এবং বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে সারা বিশ্বের সুর, তান ও লয়ের মেলবন্ধন দেখা যায়। কবির সেই স্বপ্নই যেন রূপ পেয়েছে — যত্র বিশ্বং ভবত্যেকনীড়ম। সেই কারণেই বিশ্ব নিয়ামক সংস্থা ইউনেস্কো বিশ্বভারতী তথা শান্তিনিকেতনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি দিয়েছে।

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশায় তোলা ছবির সংখ্যা বোধহয় অন্য কোনও মহাপুরুষের ক্ষেত্রেই এত বেশি নয়। রবীন্দ্রভবনের আলোকচিত্র অভিলেখাগারে প্রায় ১৮ হাজারের বেশি ছবি সংরক্ষিত রয়েছে। তার মধ্যে থেকে মাত্র ৬০টি গুরুত্বপূর্ণ ছবি বেছে নিয়ে এই প্রদর্শনীটি সময়ের ক্রমানুসারে সাজানো হয়েছে, যাতে দর্শকরা বিশ্বকবির বিশ্বভ্রমণের সামান্য হলেও একটি আভাস পান।

    একজন দর্শনার্থী অরুণাভ ঘোষ বলেন, "এই ছবিগুলো দেখে বোঝা যায় রবীন্দ্রনাথ কেবল কবি নন, তিনি ছিলেন একজন বিশ্বমানব। প্রতিবছরই রবীন্দ্রভবনের প্রদর্শনীর ওপর নজর রাখি। ‌ তবে এ বছর এই প্রদর্শনী স্মরণীয় হয়ে থাকবে।" আর এক দর্শনার্থী মৌসুমি চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বইয়ে পড়া ইতিহাস এখানে ছবির মাধ্যমে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। এত সুন্দর একটি প্রদর্শনী জনমানসে তুলে ধরার জন্য রবীন্দ্র ভবন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।"

    “বিশ্বে বিশ্বকবি” শীর্ষক প্রদর্শনী প্রসঙ্গে রবীন্দ্রভবনের কিউরেটর প্রদীপ মণ্ডল বলেন, "রবীন্দ্রনাথ ১৮৭৮ সালে আইন পড়ার জন্য প্রথমবার বিদেশ গিয়েছিলেন। শেষবার নাটকের দল নিয়ে তিনি ১৯৩৪ সালে গেছিলেন শ্রীলঙ্কায়। মাঝের সুদীর্ঘ ৫৬ বছর তিনি বিশ্বের নানা প্রান্তে গিয়েছেন। কখনো ওঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কখনো তিনি বক্তৃতা দেওয়ার জন্য গিয়েছেন। কখনো আবার বিশ্বভারতী পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য গিয়েছেন। এরমধ্যে তাঁর প্রথম বিদেশ যাত্রা ও রাশিয়ায় যাত্রা বিশেষ অভিজ্ঞতা হয়েছে কবির মননে। সেই বিষয়গুলি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে গবেষণা করে তুলে ধরা হয়েছে এবারের প্রদর্শনীতে। রবীন্দ্র অনুরাগী মানুষজন প্রদর্শনীটি দেখে অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছেন। তাই আমাদের এই প্রয়াস সার্থক। এই কারণেই রবীন্দ্রনাথ যুগের পর যুগ প্রাসঙ্গিক হয়ে যাবেন তাঁর বিশ্ব মানবতার জন্য।"

    পৌষ মেলার ভিড়, উৎসব ও আনন্দের আবহের মধ্যেই এই প্রদর্শনী হয়ে উঠেছে এক গভীর ভাবনার জায়গা, যেখানে মানুষ শুধু দেখছে না, ভাবছেও।
  • Link to this news (আজকাল)