দিল্লিতে ‘আক্রান্ত’ উন্নাওয়ের নির্যাতিতা ও তাঁর মা, শুনেই অট্টহাস্য যোগীর মন্ত্রীর, রাহুল বললেন, ‘মৃত সমাজ’
প্রতিদিন | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেটের সমানে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে সিআরপিএফের হাতে ‘আক্রান্ত’ হয়েছেন উন্নাওয়ের নির্যাতিতা ও তাঁর মা। এই পরিস্থিতিতে বুধবার বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে হাসিতে ফেটে পড়লেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী ওপি রাজভার। তারপরই সমাজমাধ্যমে নিন্দার ঝড় বয়ে গিয়েছে।
উন্নাও কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত কুলদীপ সিং সেঙ্গারকে মঙ্গলবার জামিন দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট। তারপরই দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেটের সামনে অবস্থানে বসেন নির্যাতিতা, তাঁর মা এবং সমাজকর্মী তথা আইনজীবী যোগিতা ভায়ানা। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, টেনে-হিঁচড়ে সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। বুধবার বিষয়টি নিয়ে রাজভারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিদ্রুপের সুরে বলেন, “ওদের বাড়িতো উন্নাওতে।” এরপরই হাসিতে ফেটে পড়েন তিনি।”
এদিকে বুধবার বিকেলে কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন নির্যাতিতা এবং তাঁর মা। ১০, জনপথ রোডের বাড়িতে প্রায় এক ঘণ্টা তাঁরা কথা বলেন। সূত্রের খবর, নির্যাতিতা এবং তাঁর পরিবারকে সবরকমভাবে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন রাহুল। সূত্র মারফত আরও জানা গিয়েছে, নির্যাতিতার পরিবার কংগ্রেস সাংসদের কাছে তিনটি অনুরোধ জানিয়েছে। প্রথমত, সুপ্রিম কোর্টে লড়াইয়ের জন্য শীর্ষস্তরের একজন আইনজীবী তাদের দেওয়া হোক। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তার কারণে তাদের কংগ্রেস শাসিত কোনও রাজ্যে স্থানান্তর করা হোক। তৃতীয়ত, নির্যাতিতার বাবার জন্য একটি চাকরির বন্দোবস্ত করে দেওয়া হোক। সূত্রের খবর, রাহুল সবকটিতেই সাহায্য করতে সম্মত হয়েছেন।
রাহুল তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘একজন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কি এধরনের আচরণ ন্যায্য? ধর্ষকদের জামিন দেওয়া হচ্ছে এবং নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে অপরাধীদের মতো আচরণ করা হচ্ছে। এটা কেমন ন্যায়বিচার? আমরা কেবল একটি মৃত অর্থনীতিতে পরিণত হচ্ছি না। বরং আমাদের সমাজও মৃত।’
২০১৭ সালের ৪ জুনে গণ-ধর্ষিতা হন উন্নাওয়ের কিশোরী। মূল অভিযুক্ত ছিলেন তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার। পরিবার পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলেও পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি বলে অভিযোগ ছিল। পরে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি লেখেন নির্যাতিতা। ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল যোগী আদিত্যনাথের বাসভবনের সামনে ধর্নায় বসেন নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবার। সেখানেই গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন নির্যাতিতা। এই ঘটনার পর উলটে নির্যাতিতার বাবাকেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার বাবার। একই বছর ডিসেম্বর মাসে দোষী সাব্যস্ত হয় কুলদীপ। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ এবং পকসো আইনে দোষী সাব্যস্ত করা হয় কুলদীপকে। বহিষ্কৃত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেনেগারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। কিন্তু দিল্লি হাই কোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে।