কেন্দ্র করেছে অসম্মান! গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত খাদি প্রতিষ্ঠান সংস্কারের পথে রাজ্য, বরাদ্দ ৭৬ লাখ টাকা
প্রতিদিন | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
অর্ণব দাস, বারাকপুর: ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প থেকে মহাত্মা গান্ধী নাম সরানোর সিদ্ধান্ত মোদি সরকারের। যা নিয়ে আগেই প্রতিবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, প্রতিবাদের অঙ্গ হিসাবে এবং মহাত্মাকে সম্মান জানিয়ে রাজ্যের কর্মশ্রী প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে ‘মহাত্মাশ্রী’ করার ঘোষণা করেন প্রশাসনিক প্রধান। এবার মহাত্মা গান্ধীর ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ বলে পরিচিত খাদি প্রতিষ্ঠান সংস্কারের পথে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সংস্কার হতে চলেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এর জন্য প্রায় ৭৬ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যে বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পিডব্লিউডি’কে। আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই এই খাদি প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা জানতে সরেজমিনে খতিয়ে দেখেছেন।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা আন্দোলনের বহু ইতিহাসের সাক্ষী বারাকপুর। বহুবার গঙ্গাপারের এই শিল্পাঞ্চলে এসেছেন জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী। বারাকপুর মহাকুমার মধ্যে গান্ধীজীর খুব পছন্দের একটি জায়গা ছিল সোদপুরের খাদি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে যেটি সোদপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন পানিহাটি পুরসভার ১৩নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি কোয়াটারের ভিতরে অবস্থিত। স্বদেশী বস্ত্র উৎপাদনের করতেই এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছিলেন সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় আমৃত্যু এই প্রতিষ্ঠান চেয়ারম্যান ছিলেন। কুড়ি বিঘার বেশি জমির উপর তৈরি এই খাদি প্রতিষ্ঠানটিতে সবরমতী আশ্রমের মতই ছিল গো-পালন, পশু চিকিৎসালয়, ছাপাখানা এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র।
১৯২৭ সালে এই খাদি প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করেছিলেন গান্ধীজী। পরবর্তীতে এই খাদি প্রতিষ্ঠান থেকেই বিদেশি দ্রব্য বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৩৯ সালের ত্রিপুরী কংগ্রেসে পর দেশের মধ্যে চর্চার কেন্দ্র হয়ে ওঠে এই খাদি প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তাই নয়, কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর এখানেই সুভাষচন্দ্র বোস এবং জহরলাল নেহেরুর সঙ্গে তিনদিনের ঐতিহাসিক বৈঠক করেন গান্ধীজী। এরপরই সুভাষচন্দ্র বোস কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন। নোয়াখালীতে যখন দাঙ্গা বাঁধে তখন সোদপুরের এই খাদি ভবনে ছিলেন গান্ধীজী। সেখান থেকেই তিনি নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার ঠিক আগে বাংলা এবং বিহারের সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা নিয়ে এই খাদি প্রতিষ্ঠানে আলোচনা হয়েছিল, তখনও উপস্থিত ছিলেন গান্ধীজী। আকাশবাণীতে মহাত্মা গান্ধীর প্রথম ভাষণ এই খাদি প্রতিষ্ঠান থেকেই দিয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক দিক থেকে এই ভবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কালের নিয়মে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছিল খাদি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ বছর পর রাজ্য সরকার এই খাদি প্রতিষ্ঠান সংস্কারে উদ্যোগী হওয়ায় খুশি সকলে। এই নিয়ে খাদি প্রতিষ্ঠানের সদস্য শেখর শেঠ বলেন, “ঐতিহাসিক যে ঘটনাগুলি এই খাদি প্রতিষ্ঠানে হয়েছে সেগুলি মানুষের কাছে তুলে ধরলে, বর্তমান প্রজন্ম এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে। এই খাদি প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে পানিহাটি অঞ্চলের গুরুত্ব আরও বাড়বে।”
অন্যদিকে পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ দে জানিয়েছেন, “ধন্যবাদ জানাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি মহাত্মা গান্ধীর দ্বিতীয় বাড়ি বলে পরিচিত সোদপুর খাদি প্রতিষ্ঠান সংরক্ষনের জন্য পিডব্লিউডি’কে দায়িত্ব দিয়েছেন। রাজ্য সরকার এরজন্য প্রথম পর্যায়ে ৭৫ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছেন। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে। রক্ষণাবেক্ষণ রাজ্য সরকার করবে, পুরসভা সহযোগিতা থাকবে।”