উন্নয়নের পাঁচালি ও SIR, বছর শেষে জোড়া বৈঠকে ‘মেগা’ বার্তা দেবেন অভিষেক
প্রতিদিন | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: জোড়া মেগা বৈঠক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দু’টিই হবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। প্রথমটি হবে ২৬ ডিসেম্বর। রাজ্য সরকারের ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দলকে ভোটমুখী করে দেড় মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। দলের জনপ্রতিনিধি ও পদাধিকারীদের নিয়ে থাকবেন ৫ হাজারের বেশি সদস্য। পরেরটি হবে ২৮ ডিসেম্বর। ওই দিন এ যাবৎকালের সব থেকে বড় বৈঠক করবেন তিনি। এসআইআর শুনানি পর্বে দলের বিএলএ ২-সহ এক লক্ষ কর্মীকে সেদিন গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন অভিষেক। এর আগে এই ধরনের বৈঠকের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি ২৫ হাজারের বেশি কর্মীকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে জুড়ে নিয়েছিলেন অভিষেক। এসআইআরে নির্বাচন কমিশনের একের পর এক ‘ভুল’ পদক্ষেপের প্রভাব সাধারণ ভোটারের উপর পড়েছে এবং তার জেরে নানা আশঙ্কার পরিবেশ তৈরি হয়েছে রাজ্যজুড়ে। এই পরিস্থিতিতে বছর শেষে অভিষেকের দ্বিতীয় দফার বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে বলে খবর।
২৭ তারিখ থেকে নির্বাচন কমিশনের শুনানি পর্ব শুরু হওয়ার কথা। তার জন্য বুথভিত্তিক গলদ কোথায় কী রয়ে যাচ্ছে তা যাচাই করতে কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার সাংগঠনিক স্তরে তা নিয়ে একেবারে বুথস্তরে লড়াইয়ের মন্ত্র অভিষেক বলে দিতে চলেছেন বলে জানা যাচ্ছে। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বিএলএ ২-দের নিয়ে বৈঠকে মমতা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন, এসআইআর প্রক্রিয়ায় কড়াভাবে নজরদারি চালাতে হবে, মানুষের পাশে থাকতে হবে নিরন্তর। বিএলওদের অ্যাপে একের পর এক নির্দেশিকা নানাভাবে বদল করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে জানিয়েছেন, ২৪ বার নির্দেশিকা বদলেছে কমিশন।
একটি নির্দেশিকায় এও বলা হয়েছিল যে, যদি স্থানীয়ভাবে বিএলএ ২ নিয়োগ করতে কোনও রাজনৈতিক দলের সমস্যা হয়, তাহলে বাইরে থেকেও তা নিয়োগ করা যাবে। তৃণমূল অভিযোগ তোলে, বিজেপি বিএলএ ২ দিতে পারছে না বলেই বহিরাগতদের দিয়ে কাজ করাতে এই সুবিধা তাদের দিচ্ছে ‘বিজেপির সহায়ক সংস্থা নির্বাচন কমিশন’। শুধু এই নির্দেশিকা নয়, একের পর এক নির্দেশিকা বদল, যার জেরে বিএলও-রা পড়ছেন ধন্দে। নির্বাচন কমিশনের অফিসের সামনে তা নিয়ে নিরন্তর ধরনা-বিক্ষোভ চলছে একাংশের বিএলও-র। তবে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ ভোটার।
তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যে জানিয়েছে, একজনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ গেলেও তা নিয়ে পথে নামবে তারা। পরবর্তী ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে বিজেপি নেতারা যা বলে দিচ্ছেন সেই মতোই কমিশনের নির্দেশিকা সামনে আসছে। তারা যে বিজেপির মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছে সেটা বলাই বাহুল্য। সামান্য নামের বানানের ভুলভ্রান্তিতেই নাম কেটে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। পাশাপাশি ‘শিফটেড’ বা ‘ডেড’ ভোটার বলে দাগিয়ে দিয়েও অযথা অনেক ক্ষেত্রে জীবিতদের হয়রান করা হচ্ছে। শুনানিতে ডেকে পাঠানো হচ্ছে সামান্য ভুল তথ্যের অজুহাত দেখিয়েই। অথচ ২০০২-এর ভোটার তালিকার সঙ্গে ঠিকমতো ২০২৫-এর তালিকা ম্যাপিংই করায়নি কমিশন। তার জেরেই নামের বানানের ফারাক থেকে যাচ্ছে। অথচ তার দায় চাপানো হচ্ছে ভোটারের ঘাড়ে। এ নিয়ে তৃণমূল ইতিমধ্যে কমিশনে গিয়ে তালিকা ধরে হুশিয়ারি দিয়ে এসেছে ‘এসবের কৈফিয়ত চাই’। তার প্রেক্ষিতেই শুনানি পর্বের শুরুতেই অভিষেক বিএলএ ২-দের নিয়ে জরুরি বার্তা দিতে চলেছেন ২৮ ডিসেম্বর। মনে করা হচ্ছে বিভিন্ন জেলায় যেভাবে এর আগে অবজার্ভার নিয়োগ করা হয়েছিল, এবারও তেমন কিছু করে দিতে পারেন অভিষেক।
অন্যদিকে, সরকারের ১৫ বছরের কাজের রিপোর্ট কার্ডকে সামনে রেখে রাজ্যজুড়ে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’র প্রচার শুরু হচ্ছে দলীয় নির্দেশে। গলিপথ থেকে গ্রাম, মহল্লা থেকে শহর-প্রত্যেক এলাকায় পৌঁছবে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের খতিয়ান। তার জন্য দলের জনপ্রতিনিধি ও পদাধিকারীদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেবেন অভিষেক। তৃণমূলের বক্তব্য, কেন্দ্রের ‘অর্থবঞ্চনা’ সত্ত্বেও রাজ্যের তহবিল থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, চালিয়ে যাচ্ছেন কল্যাণমূলক কর্মসূচি। বাংলার প্রাপ্য আটকে রেখেছে দিল্লি। কিন্তু তার পরেও উন্নয়ন থামেনি। এই বিষয়টিকে সামনে রেখে পাড়ায় পাড়ায়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে চলবে দলের প্রচার। যে কর্মসূচির সঙ্গেই জুড়ে যাবে সরাসরি ভোটযুদ্ধের আহ্বান। যেখানে বার্তা স্পষ্ট, সামনে অগ্নিপরীক্ষা। সমস্ত দ্বন্দ্ব ভুলে গোটা সংগঠনকে নেমে পড়তে হবে ময়দানে।