ভোটারের বাড়ির কাছাকাছি শুনানি কেন্দ্রের দাবি জানাল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের (সিইও) কাছে মঙ্গলবার এই দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা। শুনানি-পর্বের সময় অন্তত ১৫ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিল কংগ্রেস।
কোচবিহারে এসআইআর-এর ঝাড়াই-বাছাই নিয়ে অসন্তোষ জানাতে এ দিনই কমিশনে গিয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা নিশীথ প্রামাণিক। এসআইআর-এর প্রথম পর্বে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কোচবিহারের প্রাক্তন এই সাংসদের বক্তব্য, সারা রাজ্যে যেখানে গড়ে ৮% লোকের নাম ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাদ গিয়েছে, সেখানে কোচবিহার জেলায় মাত্র ৪% নাম বাদ গিয়েছে।
তৃণমূলের তরফে এ দিন শুনানি পর্বে হয়রানির আশঙ্কা করে কমিশনে একগুচ্ছ দাবি জানানো হয়েছে। দলের তরফে বলা হয়েছে, বাড়ি থেকে ৩০- ৪০ কিলোমিটার দূরে শুনানি কেন্দ্র হলে মানুষের সমস্যা হবে। যাতায়াতের সময় ও খরচের কথা উল্লেখ করে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘শুনানির ব্যবস্থাপনাকে সরল করে সে সম্পর্কে স্বচ্ছ হতে হবে।’’ এ ক্ষেত্রে ৮৫ বছরের বদলে সাধারণ ভাবে প্রবীণ হিসেবে স্বীকৃত সকলের জন্য বাড়িতে অথবা কাছে শুনানির ব্যবস্থা করার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। তৃণমূলের অন্যতম প্রতিনিধি সাংসদ পার্থ ভৌমিকের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকারের অফিসে শুনানি করতে আপত্তি থাকলে কেন্দ্রীয় দফতরে করা হোক। ভোটারের কাছাকাছি ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিসে করলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে।’’ কমিশন সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, পঞ্চায়েতের দফতরে শুনানির ব্যবস্থা হবে না, এটা কার্যত নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। বাকি দাবি কমিশন শুনেছে, বিবেচনার জন্য দিল্লির কাছে পাঠিয়েও দেওয়া হবে।
দলের তরফে সিইও’র কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার পরে চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘নামের বানানে অনেকের ভুল রয়েছে। এখন ‘লজিক্যাল ডিসক্রিপেন্সি’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যা যুক্তিতেই বোঝা যায়, তাঁদের শুনানিতে ডেকে হয়রান না করতে বলেছি।’’ একই সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও দলের তরফে নতুন করে নথি ইত্যাদি যাচাই প্রক্রিয়া সরল করতে বলা হয়েছে। এ দিনের সাক্ষাতে সিইও-র সঙ্গে দেখা করে আধার কার্ডকে নথি হিসেবে স্বীকৃত দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতোই কমিশন আধার কার্ডকে নথির তালিকায় রেখেছে। পাশাপাশি বিএলও-দের উপর নিত্যনতুন বোঝা চাপানো নিয়েও দলের তরফে আপত্তি জানিয়ে সিইও-র হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে প্রশান্ত দত্ত, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়েরা এ দিন সিইও-কে চিঠি দিয়ে দাবি জানিয়েছেন, ইংরেজি ও বাংলার পাশাপাশি হিন্দি, উর্দুতেও শুনানির নোটিস দেওয়ার ব্যবস্থা হোক এবং শুনানি-পর্বে আরও ১৫ দিন সময় বাড়ানো হোক।
এরই মধ্যে খসড়া তালিকায় নাম আছে তবে তার পরে বিএলও ফোন করে এলাকার একাধিক ভোটাদের নথি চাওয়ায় পাঁশকুড়ার বিজয়া রামচক প্রাথমিক স্কুলে মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভার চৈতন্যপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই প্রাথমিক স্কুলেই চলছিল যৌক্তিক অসঙ্গতি (লজিক্যাল ডিস্ক্রিপেন্সি) সংশোধনের কাজ। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, বিএলও অ্যাপে ওই নামে একটি ‘উইন্ডো’ সম্প্রতি জুড়েছে। যে সব ভোটারদের ২০০২-এর ভোটার তালিকায় থাকা নাম পরবর্তীতে বদলেছে, তাঁদের ক্ষেত্রে পুনরায় নথি দেখে তথ্য দিতে হচ্ছে। এই বিষয়টি বোঝার ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা থাকায় এ দিন বিক্ষোভ হয়। পরে অবশ্য সমস্যা মিটেছে। সংশ্লিষ্ট বিএলও অতনু জানা বলেন, ‘‘আমার ভুল যে নয়, তা ভোটারদের বোঝাতে পেরেছি। ভোটারদের নাম নির্ভুল রাখতেই এই সংশোধনের কাজ চলছে।’’
পুরুলিয়ার বলরামপুরের এক ভোটারের নাম মৃতের তালিকায় থাকায় শো-কজ় করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিএলও-কে। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার জেলাশাসক কোন্তম সুধীর বলেন, ‘‘জীবিত ব্যক্তির নাম কী ভাবে মৃতের তালিকায় গেল, তা জানতে চেয়ে ওই বিএলও ‘শো-কজ়’ করা হয়েছে। বিএলও সুকুমার পান্ডা বলেন, ‘‘শো-কজ়ের জবাব দিয়েছি।’’